Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রাতভর রুদ্ধশ্বাস অভিযান, গর্তে মেলে নি শিশুর অস্তিত্ব

পাইপে নামানো ক্যামেরায় ধরা দৃশ্য। ছবিঃ বিডিনিউজ২৪.কম।
পাইপে নামানো ক্যামেরায় ধরা দৃশ্য। ছবিঃ বিডিনিউজ২৪.কম।

ঢাকার শাহজাহানপুরে প্রায় চারশ’ ফুট গভীর পরিত্যক্ত নলকূপে একটি শিশু পড়ে যাওয়ার পর  প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানেও সন্ধান পাওয়া যায়নি শাহজাহানপুর রেল কলোনির শিশু জিহাদ হোসেন জিয়ার। ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপে আড়াইশ মিটার গভীর পর্যন্ত ক্যামেরা নামিয়ে ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালানোর পর শনিবার ভোররাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, শিশুটির কোনো সন্ধান তারা পাননি।

ঘটনাটি ‘গুজব’ বলেও মন্তব্য করে ফায়ার সার্ভিস। যদিও অভিযানের শুরুতে শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন উদ্ধার কর্মীরা। এদিকে, শিশুর পরিবার ও এলাকার লোকজনের অভিযোগ, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিষয়টিকে ‘গুজব’ বলছে ফায়ার সার্ভিস।

chardike-ad
শিশু জিয়াদ
শিশু জিয়াদ

প্রতিদিনের মত শুক্রবার দুপুরের খাওয়া শেষে খেলতে বের হয় ৪ বছর বয়সী জিহাদ হোসেন জিয়া। ধরাধরি খেলার এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের বিশাল মাঠের এক কোণে ওয়াসার পরিত্যক্ত ৬শ’ ফিট গভীরের এই পাইপের মধ্যে শিশুটি পড়ে যায় বলে জানায় বন্ধুরা। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে জিয়ার বাড়িতে খবর দেয় তারা। শোনামাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা। এসময় জিয়ার সঙ্গে কথাও হয় বলে দাবি তাদের।

প্রাথমিক চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সংবাদ দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। পাইপের মুখের ব্যস মাত্র সতের ইঞ্চ। তাই শুরুতেই দড়ি ফেলে তোলার চেষ্টা করা হয় ছোট্ট জিয়াকে। দড়ি ধরতে বললে সে সাড়া দেয় বলে এসময় দাবি করেন উদ্ধার কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, রশি ফেলার পর সে রশিটি ধরে, কিন্তু আমরা ওপরের দিকে তোলার সময় থেকে আর তার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না’।

২ ঘণ্টা চেষ্টার ব্যর্থ হয় উদ্ধারের প্রথম ধাপ। দ্বিতীয়বারে দড়ি বেধে চটের বস্তা ফেলে আবারো ব্যর্থ হয়ে তুলে আনা হয় কূপের ভেতরের পানি তোলার সরু পাইপটি। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় শেষমেশ শিশুর অবস্থান জানতে চেষ্টা চালানো হয় সিসি টিভি ক্যামেরায়। পাইপের আড়াইশ মিটার গভীর পর্যন্ত ক্যামেরা নামিয়ে একটি কাপড়, স্যান্ডেল, কর্কশিটের টুকরো, টিকটিকি ও কাগজের মতো অবয়ব দেখা যায়। দ্বিতীয় দফায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সার্ভেইলেন্স আইপি ক্যামেরা নামিয়েও কোনো শিশুর দেহের অস্তিত্বের খোঁজ পাননি উদ্ধারকর্মীরা।

ফলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতার মধ্যে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। শিশুটি আদৌ সেখানে পড়ে গিয়েছিল কি না, অনুসন্ধানের দ্বাদশ ঘণ্টায় সে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন কেউ কেউ।

যদি সেখানে কোনো শিশু নাই থাকে, তাহলে ‘ভেতরে আটকা পড়া শিশুটির সঙ্গে’ সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কথা বলা কিংবা তাকে দুধ বা জুস পাঠানোর বিষয়গুলো নিয়েও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়।

এসব প্রশ্নের উত্তরে আলী আহমেদ খান কেবল জানিয়েছেন, তারা আরও অনুসন্ধান করবেন। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে অভিযান শেষ করবেন না।

এদিকে, সন্তান হারানোর বেদনায় কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন মা। পরিবারের সদস্যরা সহ এলাকার কেউই উদ্ধারকারীদের কথা মানতে রাজি নন। এলাকাবাসীর দাবির মুখে শেষরাতে আরো একটি অভিযান চালানো হলেও কোনো লাভ হয়নি।