Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এবার বউ ভাগালেন জিনের বাদশা!

jiner-badsaকথিত ‘জিনের বাদশা’ প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে থাকে বলে এত দিন জনশ্রুতি ছিল। কিন্তু এবার শোনা গেল ভিন্ন কথা। আর তা হলো, অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে চম্পট দেওয়া! ঘটনা এখানেই শেষ নয়। গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে সেই বউয়ের আগের স্বামীর জমিজমা, সহায়-সম্পদ সবকিছুই মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করতেও বাধ্য করেছেন ওই জিনের বাদশা!

ধূর্ত এ জিনের বাদশার নাম আবু তালেব (৪৭)। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বাসিন্দা এই ডাকাতসর্দারকে ‘বোতল ডাকাত’ নামেই চেনে স্থানীয়রা। তবে উপজেলার উত্তর পানাপুকুর এলাকার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী, তিন সন্তানের জননী রাবেয়া খাতুনকে (৩৮) নিয়ে ভেগে যাওয়ার পর তারা জানতে পারে যে, তাদের চেনা বোতল ডাকাত এরই মধ্যে জিনের বাদশাও বনে গেছেন।

chardike-ad

জানা যায়, একাধিক ডাকাতি মামলায় অভিযোগভুক্ত আসামি আবু তালেব মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথিত জিনের বাদশা সেজে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে ৪০ কোটি টাকা ও দুই হাঁড়ি সোনার ‘গুপ্তধনের’ সন্ধান দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিনিময়ে তিনি আজাদ দম্পতিকে স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে ওই অর্থ স্থানীয় মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করার উপদেশ দেন। অন্যথায়, গুপ্তধন তো মিলবেই না, উল্টো পরিবারে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসবে বলে ভয়ও দেখান। মোবাইল ফোনে এসব প্রতারণার একপর্যায়ে রাবেয়ার ওপর ‘জিনের আছর’ পড়েছে- এমন অজুহাতে তাকে চিকিৎসার জন্য ডাকেন তালেব। আর এ চিকিৎসা কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে তালেব-রাবেয়ার প্রণয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ ডিসেম্বর রাবেয়াকে ভাগিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন তিনি। গঙ্গাচড়া থেকে পালিয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় গিয়ে জনৈক সেন্টুর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন তালেব ও রাবেয়া।

এখানে তাদের দিনকাল ভালোই চলছিল। কিন্তু মাঝপথে বাগড়া দিয়ে বসে বেরসিক পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় বেড়াতে গেলে ওই জুটিকে আটক করে পুলিশ।

‘রাবেয়ার বড় ভাই সাইদুর রহমান ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানার ওসি (তদন্ত)’- এমন দাবি করে, ছোট ভাই সাজু আহমেদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ডাকাতসর্দার আবু তালেব মোবাইল ফোনে জিনের বাদশা সেজে আবুল কালাম আজাদ ও রাবেয়া খাতুনের নানা প্রতারণা করেছেন।

তিন সন্তানের মা রাবেয়া খাতুন জানান, প্রায় চার মাস আগে একই উপজেলার আবু তালেবের সঙ্গে কোর্টে তার বিয়ে হয়। এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর তারা পালিয়ে বুড়িমারীতে এসে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বিগত দেড় বছর ধরেই আবু তালেবের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এ অবস্থায় তালেবের সঙ্গে সংসার ভেঙে গেলে, আগের স্বামীর ঘরেই ফিরতে চান বলেও জানান রাবেয়া।

এদিকে, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাবেয়ার প্রথম স্বামী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাবেয়া যদি ফিরে আসে, তাহলে তিন সন্তানের মুখে তাকিয়ে আবারও আমি তাকে নিয়ে নতুন করে সংসার শুরু করব।’

তাদের আটকের ব্যাপারে পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক আকিকুল ইসলাম জানান, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন ও পাটগ্রাম থানা-পুলিশের সহায়তায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর ডাকাতসর্দার আবু তালেব নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও তিনি গঙ্গাচড়া থানার একাধিক ডাকাতি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছেন ওই থানার ওসি (তদন্ত) ফরিদ হোসেন।

পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি আবু তালেব ওরফে বোতল ডাকাত ওরফে জিনের বাদশা একজন দাগী আসামি। তিনি আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে অপহরণ করেছেন। গঙ্গাচড়া থানার অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেফতার এবং রাবেয়াকে উদ্ধার দেখিয়ে মঙ্গলবার রাতেই তাদের গঙ্গচড়া থানার ওসি ফরিদ হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।