Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মার খেয়ে কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে গিয়েও রক্ষা হয়নি পোলিং এজেন্টদের

electionকেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে গিয়েও রক্ষা হয়নি, পোলিং এজেন্টদের। এখন তাদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সরকারি দলের হুমকিতে বিরোধীদলের অনেকেই কেন্দ্রেই যাননি। যারা গিয়েছিলেন কেন্দ্রে, মার খেয়ে অনেকেই ফিরে এসেছেন। তারপরও যারা ঠিকে ছিলেন দুপুরে প্রার্থীর ভোট বর্জনের আগে-পরে তারাও কেন্দ্র ছেড়েছেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে নাম ঠিকানা নিয়ে গেছে পুলিশ। এখন শুরু হয়েছে ধরপাকড়।

টানা সহিংসতা, প্রাণহানি আর সাধারণের ভোগান্তি। সে রেশ কাটাতেই তিন সিটিতে একযোগে নির্বাচন। একটি পক্ষের হিসাব বাদে প্রচারণাও বেশ, উৎসব মুখর। মঙ্গলবার কাঙ্ক্ষিত দিনে ভোট শুরু সকাল আটটায়। খুব বেশি সময় লাগেনি। বেলা ১০টার মধ্যেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবির বুঝে গেছে কী হতে যাচ্ছে?

chardike-ad

তারাও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে, পরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা আসে। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের বাইরে বেশিরভাগ প্রার্থীই একই মিছিলে শামিল হন।

তাদের সবার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোটের যে মহোৎসব দেখিয়েছে, তা নিকট অতীতে ৫ জানুয়ারির একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনকেও ছাড়িয়ে গেছে।

অথচ উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নির্দলীয় স্থানীয় নির্বাচন। সেনাকে ব্যারাকে বসিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করেছেন, অন্তত তাদের ভাষায়।

তারপরও দিনভর সোশ্যাল মিডিয়াসহ সবখানে একই আলোচনা, আশঙ্কা- গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষার নামে এবার ভোটাধিকারই চিরতরে বিদায় না নেয়! তাদের এই আশঙ্কার যথেষ্ট যুক্তিও হয়তো রয়েছে।

কারণ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে যেভাবে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে শুধু ভোটার নন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট সর্বোপরি নারী ভোটাররা চরমভাবে আতঙ্কিত হয়েছেন। কয়েকজন নারী পোলিং এজেন্টের নাক ফেটে রক্ত ঝরতেও দেখা গেছে।

বিভিন্ন কেন্দ্রে তাদের মধ্যে সে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু নির্বিকার নিরাপত্তা বাহিনী। এসব মানুষ ছুটেছেন, আর নিরাপত্তা চাইছেন সাংবাদিকদের কাছে। ক্ষেত্র বিশেষে সাংবাদিকরাও নিরাপদ ছিলেন না।

নারী ভোটার এবং দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্টরা জানিয়েছেন, ‘এমন অবস্থা হলে ভোট দিতেই আসতাম না। ঘরে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে রেখে এসেছি। ভাই আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে এখান থেকে বের করে দেন, ভোট জাহান্নামে যাক, আগে ঘরে ফিরি।’
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল। তবে এখানেই কি শেষ! আতঙ্কের আরো কারণ রয়েছে।

ঢাকার দুই সিটিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে মাঠেই নামতে পারেননি বেশিরভাগ বিরোধী প্রার্থী। রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনের নামে দীর্ঘদিন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। ঘরছাড়া হাজারো বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

এর ওপর মঙ্গলবার সাহস করে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট হয়েছিলেন অনেকে। তাদের কেউ কেউ মাটি কামড়ে ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রে পড়ে থাকলেও দুপুর নাগাদ সবাই হাওয়া। হয়তো স্বেচ্ছায়, নয়তো ক্ষমতাসীনদের চাপে মাঠ ছেড়েছেন।

কিন্তু পালিয়েও কী এসব পোলিং এজেন্ট পরিচয়ের দলীয় নেতাকর্মীরা রক্ষা পাচ্ছেন? সম্ভবত না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার তথ্যে জানা গেছে, সকালে এসেই তাদের কাছ থেকে পোলিং এজেন্টদের নাম-পরিচয় বৃত্তান্ত নিয়ে গেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দিতে না চাইলে ধমকেছেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী শিবিরের পোলিং এজেন্টদের তথ্য, মোবাইল নম্বর, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকার সমর্থক প্রার্থীর এজেন্টদেরও যে একেবারে নেওয়া হয়নি তা নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব তথ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজটা কী?

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো আরো একটু সময় লাগবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর দাবিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
দলটির ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এনায়েত হোসেনের তিনজন নারীসহ ৩০ জন পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণের পল্টনের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সাতজন নারীসহ ২৭ পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে।