Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

bangladesh-bankবাংলাদেশে ৯৫ ভাগ রেমিট্যান্স আসে বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে। এ ১৯টি দেশের মধ্যে ৭টি দেশ থেকেই সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্সের অবদান মধ্য প্রাচ্যের ৮টির মধ্যে তিনটিরই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ হয়েছে কুয়েত, লিবিয়া ও ইরান। আর বিশ্বের অন্য ১১টি দেশের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান ও ইটালি থেকে।

chardike-ad

রেমিট্যান্স প্রবাহের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, গত ৮ বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে হারে শ্রমিক ফিরে এসেছে ওই হারে যায়নি। এর প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, আশঙ্কার বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে অব্যাহতভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া। কেননা, মধ্যপ্রাচ্য থেকেই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আসে।

এর মধ্যে বেশির ভাগই আসে সৌদি আরব থেকে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলেও গেলো অর্থবছরে কিছু বেড়েছে। যেমন সমাপ্ত অর্থবছরে এই দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩৪ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরে ছিল ৩১২ কোটি ডলার।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের তৃতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স আসে কুয়েত থেকে। এ কুয়েত থেকে গত চার অর্থবছর ধরে টানা কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। যেমন, ২০১১-১২ অর্থবছরে কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৯ কোটি ডলার, পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১২-১৩ অর্থবছরে কমে নামে ১১৮ কোটি ডলারে।

এর পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আরো কমে নামে ১১০ কোটি ডলারে। এরই ধারাবাহিকতায় সমাপ্ত অর্থবছরে আরো কমে নামে ১০৭ কোটি ডলারে।

একইভাবে লিবিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। গেলো অর্থবছরে লিবিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে চার কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল সাত কোটি ডলার।

এ দিকে শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে না, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। যেমন, যুক্তরাজ্য থেকে গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার, পরের অর্থবছরে তা কমে নামে ৯০ কোটি ১২ লাখ ডলারে।

আর সমাপ্ত অর্থবছরে তা আরো কমে নামে ৮১ কোটি ডলারে। একইভাবে জার্মানি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে গত অর্থবছরে দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার থেকে কমে নেমেছে দুই কোটি ১১ লাখ ডলার। জাপান থেকেও টানা চার বছর যাবত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে।

যেমন, ২০১১-১২ অর্থবছরে দুই কোটি ২১ লাখ ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই কোটি ১১ লাখ ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং গত অর্থবছরে তা আরো কমে নামে এক কোটি ৬৩ লাখ ডলারে।

একইভাবে ইটালি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে কমে ২৭ কোটি ডলার থেকে ২৬ কোটি ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ স্থবিরতার আমদানি কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা না থাকায় বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

এক দিকে বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় আমদানি কমে যাচ্ছে, অপর দিকে ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকে বিনিয়োগ চাহিদা নেই বললেই চলে। নতুন নতুন উদ্যোক্তাও আর আসছেন না। এর ফলে সামগ্রিক আমদানি কমে গেছে। আর এতে সমস্যায় পড়েছে ব্যাংকগুলো।

অনেকেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ করছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকায় এখন উচ্চদরের ডলার এখন তাদের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে ডলারের চাহিদা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসছেন।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আর আগের মতো ডলারের বিপরীতে টাকা দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিল নামক বন্ড ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে।