প্যারিসের কয়েকটি স্থানে শুক্রবার রাতে প্রায় একইসাথে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলির পাশাপাশি বোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়।
বিবিসি বাংলার কাছে কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
প্যারিসে যেসব স্থানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তারই একটির কাছে, একটি কফির দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত চিত্র সিঁথি সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলেন, শুক্রবার এরকম স্থানে অনেক মানুষের ভিড় থাকে। হঠাৎ করেই সেখানে পুলিশের আনাগোনা দেখতে পান। বাইরে গুলির শব্দ শোনা যেতে থাকে আর পুলিশ এসে কফির দোকানের দরজা আটকে দেয়।
চিত্র সিঁথি বলছেন, ”গুলির শব্দ শুনে ভয়ে আমরা পেছনের দরজা দিয়ে একটি বাগানে গাছের নিচে এক ঘণ্টার মতো লুকিয়ে ছিলাম। পুলিশ বলেছে, তোমরা এখান থেকে নড়ো না, কারণ সন্ত্রাসীরা এখনো গুলি ছুড়ছে। সেখানে আমরা ৮০/৯০ জনের মতো লুকিয়ে ছিলাম।”
তিনি আরো বলেন, ”কনসার্ট হলে জিম্মিদের উদ্ধারে পুলিশ হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান শুরু করে। তখন আমাদের বলা হয়, তোমরা এখনি ট্যাক্সি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যাও।”
ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ”এই প্রথমবারের মতো প্যারিসে আমরা এ ধরণের চিত্র দেখলাম যে, আমাদের মতো শত শত তরুণ বিভিন্ন গলিতে লুকিয়ে রয়েছে। তারা আস্তে আস্তে বেড়িয়ে গাড়ি ধরার চেষ্টা করছে। মেট্টো বন্ধ করে দেখা হয়েছে, রাস্তা রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড। চারদিকে শুধু পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স। শুক্রবার রাতে প্যারিস সরগরম থাকে। কিন্তু প্যারিসের আজকের মতো এরকম চিত্র আমি আর কখনোই দেখিনি, চারদিকেই নীরব, ভীতিকর একটি পরিবেশ।”
প্যারিসের আরেকটি এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের বাসার ঠিক উল্টোদিকে একটি এলাকায় হামলা করে সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, জানালা দিয়ে আমরা অনেক লোকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখতে পাই। কিছু পরে আমাদের একজন গ্রাহক সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দশ-বারোজন মানুষ মাটিতে পড়ে রয়েছে।
তিনি বলছেন, আমি ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করছিলাম। প্রচুর মানুষের ছোটাছুটির শব্দ শুনতে পাই। হঠাৎ করে এরকম একটি পরিস্থিতি দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। তখন অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাই।
রোডে দ্য শাও নামের সড়কের পাশে একটি রেস্তোরা হামলা চালিয়ে অন্তত ১০জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার পাশেই একটি এশিয়ান রেস্তোরা কাজ করেন বাংলাদেশের লাভলু বড়ুয়া।
তিনি বলেন, ”আমাদের রেস্তোরার দুই শ’ গজ দুরেই, একটি ফরাসি রেস্তোরায় টেরাসে (খোলা জায়গা) বসে খাবার ব্যবস্থা আছে। সন্ত্রাসীরা সেটা লক্ষ্য করেই হামলা করে। টেরাসে বসে যারা খাচ্ছিল, তাদেরকে লক্ষ্য করেই তারা গুলি করতে শুরু করে।”
গোলাগুলির শব্দ শুনে প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন হওয়ায় হয়তো কেউ আতশবাজি ফোটাচ্ছে। একটু পরে দেখতে পেলেন, সব রেস্তোরার দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, তাদের রেস্তোরার দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়।
লাভলু বলেন, ”জানালা দিয়ে আমরা অনেক লোকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখতে পাই। কিছুক্ষণ পরে আমাদের একজন গ্রাহক সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দশ-বারোজন মানুষ মাটিতে পড়ে রয়েছে।”
মেট্টো চলাচল বন্ধ আর রাস্তাগুলো পুলিশ আটকে দেয়ায় প্রায় ৪৫ মিনিট হেঁটে তিনি বাসায় ফেরেন।