Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পদ্মা সেতুর নিলামে অংশ নিবে দুই কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান

অনলাইন প্রতিবেদক, ১৩ জুলাই ২০১৩:

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের নিলামে অংশ নেবে কোরিয়ান দুই প্রতিষ্ঠান স্যামসাং সিএন্ডটি কর্পোরেশন ও ডেলিম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন। বাংলাদেশী দৈনিক ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন দক্ষিন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লী ইয়ুন-ইয়ং। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পদ্মা সেতুর জন্য আহ্বানকৃত দরপত্রের প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা চূড়ান্ত নিলামে অংশ নিতে শিগগিরই ঢাকা আসছেন। সেপ্টেম্বরে এই নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে।
26250_in_amb2_1
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ক্রমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে ওঠা দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের আরও তৎপর হওয়া উচিৎ। বার্ষিক ৫ লক্ষ ২০ হাজার কোটি ইউএস ডলারের আমদানি বাণিজ্য করে দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ৯ম অবস্থানে রয়েছে যেখানে বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের শেয়ার ০.০৬ শতাংশ।

chardike-ad

রাষ্ট্রদূতের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে দেড়শ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি গত পাঁচ বছরে ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা মোট পণ্যের ৯৫ শতাংশকেই শুল্ক ও করমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে বাংলাদেশকে দেয়া শুল্ক ও করমুক্ত সুবিধা বাতিল বা কমানোর কোন ইচ্ছাই কোরিয়া সরকারের নেই বলেও জানান লী ইয়ুন-ইয়ং। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিগুণ জনশক্তি রপ্তানি পারবে যদি কোরিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়। লী জানান, বর্তমানে কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ৩০ শতাংশই অবৈধ অভিবাসী যাদেরকে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিন কোরিয়ায় আরও অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস)-এর আয়তায় দক্ষিন কোরিয়া প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই সিস্টেমের অধীনে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের কাছে তাঁদের কর্মী চাহিদার কথা জানায়। সরকার চাহিদা মোতাবেক কর্মীদের তালিকা সরবরাহ করে এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সে তালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে থাকে।

লী বলেন, বাংলাদেশী শ্রমিকদের গড় ভাষাগত ও কারিগরি দক্ষতা যথেষ্ট ভালো। কিন্তু তাঁরা মাঝেমাঝেই কর্মক্ষেত্র বদল করে যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির লঙ্ঘন। এর ফলে বাংলাদেশী কর্মীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং কোরিয়ান নিয়োগদাতারাও বাংলাদেশ থেকে বেশী লোক নেয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

বাজারের পরিধি, জিডিপির বার্ষিক অগ্রগতি ও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশ অনেক কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের কাছেই সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠছে বলে জানান কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত। তবে কোরিয়া থেকে আরও অধিক বিনিয়োগ পেতে কোরিয়ান ইপিজেড সংক্রান্ত ইস্যুগুলো সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এ কূটনীতিক। তিনি বলেন, কোরিয়ান ইপিজেড সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে গেলে বাংলাদেশ কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর বৈদেশিক বিনিয়োগের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমান আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে।

লী বলেন, “কেইপিজেডের সমস্যাগুলো সমাধানে আরও দেরী হলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। আমি আশা করি বাংলাদেশ সরকার এ সমস্যাগুলো সমাধানে তড়িৎ পদক্ষেপ নেবে।”

তিনি অবিলম্বে কেইপিজেডের সম্পূর্ণ জমির হস্তান্তর চুক্তি সম্পাদন ও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনর্বহালের তাগিদ দেন। কেইপিজেডের কার্যক্রম পূর্ণোদ্দমে শুরু হলে দেড় শতাধিক কোম্পানির কাছ থেকে বার্ষিক দেড়শ কোটি ইউএস ডলারের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে এবং এর মাধ্যমে ১ লক্ষেরও বেশী লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত জানান, স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস, লট্টে গ্রুপ, সিজে গ্রুপ, কোরিয়ান টেলিকম ও ডিয়াডেন্ট গ্রুপ বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র ও সুযোগ খুঁজছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলেই কোরিয়ান কোম্পানিগুলো নতুন উদ্যমে বিনিয়োগ শুরু করবে।

তিনি আরও জানান, স্যামসাং কন্সট্রাকশন, দেউ ইন্টারন্যাশনাল, হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং ও হুন্দাই কন্সট্রাকশন বাংলাদেশে চারটি বড় আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে। আরও একটি কোরিয়ান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা-আশুলিয়া ফ্লাইওভারে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আকরাম উদ্দীন আহমেদ কোরিয়া-বাংলাদেশ যৌথ বানিজ্য পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা খুব শীঘ্রই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের কোরিয়ায় আমন্ত্রণ জানাবো যাতে করে তাঁরা সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে এমন একটি সংগঠন গড়ে তুলতে পারেন।”

ঢাকা-সিউল সরাসরি ফ্লাইট শুরুর ব্যাপারেও আলোচনা চলছে বলে জানান লী। এটি চালু হলে বিপুল সংখ্যক কোরিয়ান পর্যটক বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হবে এবং দু’দেশের বানিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের সাথে মুক্ত বানিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের সম্ভাবনা বিষয়ে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে এফটিএ চালু করলে দক্ষিন কোরিয়াও তাতে আগ্রহী থাকবে।

উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত জানান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ফান্ডের আওতায় সম্প্রতি বাংলাদেশকে ৩০ কোটি ইউএস ডলার প্রদান করা হয়েছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক প্রকল্পের কাজে খুব শীঘ্রই ব্যয় করা হবে।

কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সীর (কইকা) কথা উল্লেখ করে লী ইয়ুন-ইয়ং বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে কোইকার ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক দেশব্যাপী কাজ করছেন। বাংলাদেশে কোইকার উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডভান্সড নার্সিং প্রতিষ্ঠা, ঢাকার ১০০ টি মাধ্যমিক স্কুলে আইটি ল্যাব স্থাপন, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের তদন্ত কাজে সহায়তা ও চট্টগ্রাম টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের সংস্কার।

বাংলাদেশ-দক্ষিন কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তিতে দু’দেশের সংস্কৃতি ও জনশক্তি বিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে বলে জানান কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সংস্কৃতি বিনিময় অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন এবং উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের পরস্পরের দেশ সফরের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।