Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট

base_1478549105-us-2

অন্যান্যবারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উত্তেজনা ছড়িয়েছে একটু বেশিই। এমনকি প্রচারণা চলাকালেই অনেক নিশ্চিত পরিস্থিতি মোড় নিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে। তবে জনমত জরিপে বরাবরই এগিয়ে থেকেছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। যদিও শেষদিকে এসে জনপ্রিয়তার পাল্লা ভারী করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পদটিতে কে বসতে যাচ্ছেন— প্রথম নারী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন, নাকি রিয়েল এস্টেট মোগল ডোনাল্ড ট্রাম্প, সে রায় আজ দেবেন মার্কিনরা।

chardike-ad

এবারের নির্বাচনে অনেক কিছুই প্রথমবারের মতো ঘটেছে ও ঘটতে চলেছে। এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেসের চূড়ান্ত রাউন্ডে অবতীর্ণ হয়েছেন কোনো নারী। জিতলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারিই যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য। এছাড়া এবারই প্রথম দেশটির নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার নিরাপত্তা। নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর মধ্যে যেভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে, মাত্রার দিক থেকেও যে তা এবারই প্রথম, এতেও কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এবারই প্রথম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে উঠেছে এত মারাত্মক সব অভিযোগ, যার প্রতিটিই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আক্রমণাত্মক ও বর্ণবাদী সব বক্তব্যের কারণে তার ওপর চটেছেন অনেকেই। এর পরও ট্রাম্পের পেছনে জনসমর্থন যে কম ছিল, বিষয়টা তাও নয়। কট্টর রিপাবলিকানরা ছাড়াও বেকার শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকগোষ্ঠী আর রিসেশনে হতাশ মধ্যবিত্তের ক্ষোভ তার উত্থানের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও বর্ণবাদী ও নারী অবমাননাকারী বক্তব্যের জন্য নির্বাচনে তার কোনো আশা নেই বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। তার ওপর প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে হিলারির কাছে গো-হারা হেরে এ ব্যবধান আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প নিজেই।

এ অবস্থায় ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে এফবিআইয়ের ঘোষণা। ই-মেইল কেলেঙ্কারিতে হিলারির বিরুদ্ধে আবারো নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দেন এফবিআই প্রধান জেমস কমি। সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তায় ধস নামে হিলারির। আর এর বিপরীতে নির্বাচনী জরিপগুলোয় দেখা যায়, ট্রাম্পের জয়ের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে হু-হু করে।

তবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের ঠিক আগে আগে হিলারিকে নির্দোষ ঘোষণা করেন জেমস কমি। যদিও ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আরো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য গোপন করে বিল ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের নামে অনুদান গ্রহণ থেকে শুরু করে দুর্নীতির অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ইরাকসহ বাইরের দেশগুলোয় যুদ্ধ পরিচালনায় তার সমর্থন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন নানা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্নের অবতারণা করে। আর উইকিলিকসও তার বিরুদ্ধে প্রকাশ করে চলেছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।

এবারের নির্বাচনে অদৃশ্য এক খেলোয়াড়ের ভূমিকা

নিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে বারবার হিলারির নির্বাচনী তথ্য চুরির প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন ডেমোক্র্যাটরা। আর ই-মেইল কেলেঙ্কারি তো হিলারির পায়ের নিচের মাটিই কেড়ে নিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান সবাইকে হতবাক করলেও শিক্ষাবঞ্চিত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক ও নানা কারণে বিপর্যস্ত মধ্যবিত্তরাই হয়ে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচনে তার প্রধান শক্তি। এছাড়া অভিবাসন নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান ও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার ঘোষণাও বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের ট্রাম্পের কাছে টেনে এনেছে।

নির্বাচনে যদি হেরেও যান, তার পরও সবাই ট্রাম্পকে মনে রাখবে অনন্য এক ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার পর থেকে তিনিই বোধ হয় প্রথম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, ঘোষণা দিয়ে যার পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন নিজ দলের রাজনীতিবিদরা। ১১ বছর আগে নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের করা অপমানজনক এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্পিকার পল রায়ানের নেতৃত্বে এক দল রিপাবলিকান ট্রাম্পের পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। যদিও পরবর্তীতে এ বিবাদ নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি।

নির্বাচনী হিসাব-কিতাব: কার কতটা জিততে হবে?

নির্বাচনী পাল্লায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের দিকটা একটু ভারী থাকলেও ঘটে যেতে পারে যেকোনো কিছুই। শুরু থেকেই বেশ পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে হিলারির ঘাড়ের ওপরই নিঃশ্বাস ফেলছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় উভয়ের কাছেই গুরুত্ব পেয়েছে ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য। এছাড়া উত্তরের মিশিগান ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকেও নজর রয়েছে দুই প্রার্থীর। অঙ্গরাজ্যগুলো এত দিন ডেমোক্র্যাট ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবারের নির্বাচনে রঙ বদলে ফেলার।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নর্থ ক্যারোলাইনা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জিততেই হবে। চার বছর আগের নির্বাচনেও অঞ্চল দুটো ছিল রিপাবলিকান প্রার্থীর দখলে। ওই সময় দুটি অঙ্গরাজ্যেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রিপাবলিকান মিট রমনি। এছাড়া ওবামার জিতে নেয়া ফ্লোরিডা, ওহাইও ও আইওয়া অঙ্গরাজ্যের সমর্থনও তাকে আদায় করে নিতে হবে।

এসব অঙ্গরাজ্যের যেকোনো একটিতে হার ট্রাম্পের ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট জয়ের পথকে আরো কণ্টকাকীর্ণ করে তুলতে পারে। তবে ট্রাম্প যদি ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানের মতো অঙ্গরাজ্য ছিনিয়ে নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে তার কাছে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয়ের গুরুত্ব কিছুটা কমে যাবে। সর্বশেষ ছয়টি নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোটসমৃদ্ধ দুটি অঙ্গরাজ্যেই টানা জিতে এসেছে ডেমোক্র্যাটরা।

যদি তা না ঘটে, নর্থ ক্যারোলাইনা ও অ্যারিজোনা ছাড়াও ফ্লোরিডা, ওহাইও ও আইওয়া রাজ্য তাকে ডেমোক্র্যাটদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতেই হবে। এসব অঙ্গরাজ্য মেইনের দুটি জেলার আসন মিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজে ট্রাম্পের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬০-এ। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের যেকোনোভাবে আরো ১০টি ইলেকটোরাল ভোট জোগাড় করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিউ হ্যাম্পশায়ারের চারটি ও নেভাদার ছয়টি ইলেকটোরাল আসনই তার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া কলরাডোর নয়টি, মিশিগানের ১৫ ও পেনসিলভানিয়ার ২০টিও তার জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে।

নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই কলোরাডো, মিশিগান, মিনেসোটাসহ নানা অঙ্গরাজ্য চষে বেড়িয়েছেন ট্রাম্প। শেষ মুহূর্তে ভোট যতটা ছিনিয়ে আনা যায়, ততটাই লাভ তার জন্য।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির জয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলো হলো— পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা। অঙ্গরাজ্যগুলোকে টার্গেট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও। কিন্তু হিলারির জন্য আশার বিষয় হলো, এর প্রতিটিতেই নির্বাচনী জরিপে এগিয়ে থাকার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তিনি। আর দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এসব অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশ ভোটারের মধ্যে ভোটগ্রহণের দিন ছাড়া নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। অর্থাত্ এসব জরিপের ফলের ওপর ভিত্তি করে এখানকার নির্বাচনী ফল নিয়ে পূর্বাভাস দেয়ায় পণ্ডশ্রমের শঙ্কাও যথেষ্ট।

এ তিন অঙ্গরাজ্য ধরে রাখার পাশাপাশি নর্থ ক্যারোলাইনা, ফ্লোরিডা ও ওহাইওর মধ্যে যেকোনো একটিতে জিততে পারলেই হিলারির জন্য হোয়াইট হাউজের ঠিকানা নিশ্চিত। এর মধ্যে সবক’টিতেই হেরে গেলে তাকে ভার্জিনিয়া, কলরাডো, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নেভাদায় অবশ্যই জিততে হবে। হিলারির জন্য আশার বিষয় হলো, এসব অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনা প্রবল।