আজীবন আপসহীন, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম আর জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান সাধক উপমহাদেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিকের মধ্যে অতীব বৈশিষ্ট্যময় দিক হচ্ছে, প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ ও পরিবেশের মাঝে তার রাজনীতি সঠিকভাবে প্রয়োগে পিছপা হতেন না। মওলানা ভাসানী এমনই একজন জাতীয় নেতা ছিলেন, যার জীবন আলোচনা বাংলাদেশের অসমাপ্ত জাতীয় মুক্তি ও গণমুক্তি সংগ্রাম এবং সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইকে শাণিত ও শক্তিশালী করতে পারে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও সার্বিক সমাজ প্রগতি অর্জনে তার প্রচেষ্টা ছিল নিরলস। মওলানা ভাসানী আজীবন জমিদার-জোতদার-মহাজন-সাম্রাজ্য বা দ্বী-আধিপত্যবাদী শক্তির দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, উপমহাদেশের আজাদী সংগ্রামে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সামনের কাতারে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আওয়ামী মুসলিম লীগ-আওয়ামী লীগ-ন্যাপের মতো রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা, কৃষকদের অধিকার আদায়ে কৃষক সমিতি গঠন ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।
তিনি আজীবন লড়াই করেছেন সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, ঔপনিবেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা, নব-সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন পাকিস্তানি আধা ঔপনিবেশিকতাবাদের কালো থাবা থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। বিশ্ব শান্তির জন্য তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা, শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ধর্মান্ধতা ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন- কোথায় নেই মওলানা ভাসানী।
অন্য দিকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন, জনতার অধিকার আদায়, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের পতাকা-মানচিত্র রক্ষা, ভারতীয় পানি-সীমান্ত-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনতার সংগ্রাম-আন্দোলনকে সংগঠিত করেছেন তিনি। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী কেবল একটি নাম নয়, এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি সব রাজনৈতিক মতপার্থক্যের গণ্ডিকে অতিক্রম করে সব জনমানুষের প্রাণের নিকটতম স্থানে পৌঁছেছিলেন। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে রাজনৈতিক সভামঞ্চে তিনি ছিলেন অনন্যসাধারণ। শ্রোতার বুকে আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলনে উজ্জীবিত করার জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি।
জনগণের প্রতি মায়ের মমতাসিক্ত মনের অধিকারী মওলানা ভাসানী শুধু জনগণের জন্যই রাজা-মহারাজার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, শোষক-জোতদারের ধানের গোলা লুট করেছিলেন, ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছেন, ১৯৫৪ সালের মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটিয়েছেন, ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার মাধ্যমে বাঙালিকে প্রথম স্বাধীনতার মন্ত্র শিখিয়েছেন- স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা লাভের পর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সংরক্ষণে আপসহীন চারণের মতো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে নিঃশেষে নিবেদন করেছেন। রাজনীতিবিদ হয়েও তাই মানবতার এই মহান শিল্পী জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জনগণের সেবায় নিজের জীবন নিঃশেষে ব্যয় করে গেছেন, শিক্ষকের মতো নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে উপমহাদেশের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অবহেলিত, অত্যাচারিত মানুষকে আশা-আকাক্সক্ষার বাণী শুনিয়েছেন, আপসহীন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শাসকের ভ্রুকুটি, শত্রুর চোখ রাঙানি, জেল-জুলুমের মুখে অকম্পিত হৃদয়ের বিশাল মহীরুহের মতোই যিনি এ দেশের মানুষকে অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বাণী শুনিয়েছেন, তিনি হলেন অগ্নিপুরুষ মওলানা ভাসানী। আপসহীন সংগ্রামের অগ্রদূত হিসেবে জাতিকে দিয়েছে ’৪০-এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আজাদী আন্দোলন, ’৫০-এর দশক ও ’৬০-এর দশকে সর্বশেষ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্য রক্ষায় বারবার তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তার সচেতনতা ও সদাজাগ্রত কণ্ঠ বিভিন্ন সময়ের ক্রান্তিলগ্নে আমাদের আকাক্সিক্ষত পথের নিশানাই দেখিয়েছে। তিনি এমনই এক সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, যখন আমরা ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নের মুখোমুখি। সীমান্তে গোলযোগ সৃষ্টি, ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা গঙ্গা নদীর পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় মওলানা ভাসানীর প্রয়োজনীয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি।
তার বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনকাহিনী কথার মালা গেঁথে শেষ করা যাবে না। সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে শৈশবেই পিতৃহীন হন তিনি। অল্প বয়সেই বোগদাদের আত্মাধিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা শাহ নাসিরউদ্দিন বোগদাদী রহ:-এর সংস্পর্শে এসে তিনি নতুন জীবনবোধে অনুপ্রাণিত হন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের আসামে চলে যান। সেখানে তখন অসমীয় ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছিল। বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার ছিনতাই করছিল শাসকগোষ্ঠী। আসামে গমন করে মওলানা ভাসানী লাইন প্রথার নিষ্পেষণে জর্জরিত বাঙালিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তারই প্রেরণা ও সংগ্রামী জীবনাদর্শের ডাকে নিপীড়িত জনতার মাঝে বিদ্রোহের অগ্নি জ্বলে ওঠে। কেঁপে ওঠে ব্রিটিশ সরকারের ভিত। সরকার তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করে। ব্রিটিশ শাসন অবসানের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ইতিহাসে যাদের নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো লেখা থাকার যোগ্য, মওলানা ভাসানী তাদের মধ্যেই পড়েন। মূলত তার সংগ্রামী আন্দোলনের কারণেই সিলেট পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়েছে, আজকে যা বাংলাদেশের অংশ।
ভাসানচরের ঐতিহাসিক সম্মেলনে মুগ্ধ আসামের নির্যাতিত-নিপীড়িত জনতা তাকে ভাসানী উপাধিতে অলঙ্কৃত করেন। ব্রিটিশ কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায়। সদ্যপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে সংগ্রামের সূচনা করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ, যা পরে হয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানী। যদিও আজকের আওয়ামী লীগ ইতিহাস থেকে তাদের জন্মদাতার নামটিও বাদ দিতে কুণ্ঠিত হয় না। স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সাথে মতবিরোধ ঘটলে তিনি ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের আহ্বান করেন এবং সেখান থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারণের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ গঠন করেন।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ও স্বেচ্ছাচারবিরোধী ২১ দফা সংগ্রাম, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৯-এর আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৭২-৭৫ আওয়ামী দুঃশাসন-বিরোধী সংগ্রাম, ’৭৬-এর ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফারাক্কা লংমার্চে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে লাখো কোটি মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন। বস্তুত ৭৫ বছরের অধিককালে জাতীয় জীবনের এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নেই, যেখানে তার সক্রিয় ভূমিকা নেই।
মওলানা ভাসানী প্রগতিশীল ও শোষণমুক্ত সমাজ ধারার সাথে ধর্মের সুমহান আদর্শের রাখিবন্ধন করতে চেয়েছিলেন। তার সারা জীবনের সংগ্রাম ছিল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ সাধনের। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু অপ্রত্যাশিত না হলেও আকস্মিক ছিল। লাখো কোটি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি মৃত্যুবরণ করেননি, তিনি চিরঞ্জীব।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ নিম্নমান, কৃষি-শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুতেই ধস নেমেছে। কলকারখানা, গার্মেন্টপ্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর শ্রমিক হচ্ছে বেকার। এক-এগারোর পরবর্তী ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির দোসররা ক্ষমতায় আশার পর ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশপ্রেমিক বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে ৫৭ জন মেধাবী অফিসারকে হত্যা করে ঐতিহ্যবাহী বিডিআরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে আজ সীমান্ত উন্মুক্ত, ভারতীয় বিএসএফের আগ্রাসন প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
ট্রানজিটের নামে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে করিডোর দেয়া হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর ও আশুগঞ্জ বন্দর ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশকে পরিপূর্ণ ভারতের বাজারে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের ওপর চলছে ভারতীয় আধিপত্যবাদী পুঁজির আগ্রাসন। একই সাথে রাজনৈতিক আগ্রাসনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান কালে একটা দেশ ও জাতিকে পদানত ও অধীনতাপাশে আবদ্ধ করা হয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে, সামরিক আগ্রাসন দিয়ে নয়। এমনই অধীনতার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে আজ আবারো চলছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে, যেমনটি হয়েছিল স্বাধীনতার পরবর্তী শাসনামলে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ আজ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের অধীনতা ও সব বিদেশী শোষণ-আধিপত্যমুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ জাতীয় মুক্তি ও জনগণের মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে রত। এ সংগ্রামে দেশের জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানীর সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা ও প্রেরণা গ্রহণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দেশপ্রেমিক মহানায়ক হচ্ছেন মজলুম জননেতা। প্রতিটি সমাজ তার ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই জন্ম দেয় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমাদের সমাজে এমনই একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান হচ্ছেন মওলানা ভাসানী। মজলুম জননেতা তার রাজনৈতিক জীবনে দলবদল করেছেন, তৈরি করেছেন দল। কিন্তু তার আদর্শ কখনো বদল করেননি। তার স্বপ্ন সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদমুক্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি। মজলুম জননেতাকে শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইকে এগিয়ে নেয়া এবং সব দেশপ্রেমিক শক্তির সুদৃঢ় ঐক্য রচনা করা ও রক্ষা করা।
বাংলাদেশে তিনি সম্প্রসারণবাদ-বিরোধী জাতীয় ঐক্যের রাজনীতির সার্থক প্রয়োগ করেছেন। দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানোর সাহস এবং নির্যাতনের মুখেও অবিচলতা মানুষকে মৃত্যুঞ্জয়ী করে। মওলানা ভাসানী তেমনই একজন মানুষ। মওলানা ভাসানী সম্পর্কে চূড়ান্ত রায় দেয়ার সময় এখন তো নয়ই, অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এই ভূখণ্ডের মানুষের আরো অনেক উত্থান-পতনের পরই শুধু অনাগত গবেষকদের পক্ষে একটি আপাতত রায় দেয়া সম্ভব হতে পারে। এই জাতি আরো অনেক দুর্ভোগ পোহাবে, তারপরই শুধু উপলব্ধি করা সহজ হবে তার সময় মওলানা ভাসানী অভ্রান্ত ছিলেন- না বিরোধী ও প্রতিপক্ষরা সঠিক ছিলেন।
মৃত্যুর ৪১ বছর পর তিনি এখন প্রশংসা ও সমালোচনার ঊর্ধ্বে। এখন কেউ তার সমালোচনা করলে তার উচ্চতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাদের আজ অগ্নিশপথ বাণী উচ্চারণ করা উচিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্নকারী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে জাতীয় ঐক্যমন্ত্রে বলীয়ান হওয়ার যে মহামন্ত্রধ্বনি মওলানা ভাসানী শুনিয়ে গেছেন, সেই মন্ত্রে উজ্জীবিত এ দেশের মানুষ অতন্ত্রীর মতো জেগে আছে, জেগে থাকবে। প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক আন্দোলনের জনক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে মহানায়ক মওলানা ভাসানীই হবেন আমাদের সব প্রেরণার উৎস। মওলানা ভাসানীর অগ্নিকণ্ঠই আমাদের পথ দেখাবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে অনাগত উজ্জ্বল ভবিষ্যতে। তার স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে বাংলার মানুষের হৃদয়ে।
পরিশেষে ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানীর অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই, ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মজলুম জননেতা প্রদর্শিত পথ ভুলে গেলে কিংবা সেই পথ থেকে বিচ্যুত হলে জাতি হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা-মানচিত্র রক্ষায় মজলুম জননেতার প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হতে হবে।
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, রাজনীতিক