Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতার নয়

bangladesh-govটানা দশ বছর ধরে ঘষামাজার পর সরকারি কর্মচারী আইন আবারও আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। গেল ডিসেম্বরে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি কর্তৃক গঠন করে দেয়া উপকমিটি তাদের সুপারিশ রিপোর্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে।

খসড়া প্রস্তাবনাটি সচিব কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। এতে মূলত প্রস্তাবিত আইন থেকে ৩টি ধারা এবং অনেকগুলো উপধারা বাদ দিতে বলা হয়েছে। যার সংখ্যা ২৫টি।

chardike-ad

সংশ্লিষ্ট একজন পদস্থ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, মূল আইনে বেশ কিছু ধারায় বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক বেশি বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তারা মনে করেন, এতে করে আলোচনা-সমালোচনা করতে গিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ আইনটি চূড়ান্ত হওয়া থেকে পিছিয়ে পড়বে। তাই তারা মনে করেন, আইনে শুধু মৌলিক দিকগুলো বলা থাকবে। এর বাইরে যা কিছু প্রয়োজন সব বিধি দ্বারা সমাধান করা হবে।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি পূর্বানুমতি বতীত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা সম্পর্কিত বিধানটি আইনের ৪৬ ধারা থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।

উল্লেখযোগ্য সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে প্রস্তাবিত আইনটির দ্বাদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি সংক্রান্ত ৪৬ ধারায় বর্ণিত দুদক আইনের ক্ষমতাবলে কর্মচারীকে গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেয়ার বিষয়টি আইন থেকে বাদ দিতে সুপারিশ করা হয়।

আইনটির এ ধারার উপধারা (১)-এ বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ৫ ধারার অধীন গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনুরূপ পূর্বানুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।’

ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা সংক্রান্ত ৪৭ ধারার উপধারা (১)-এ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে উপকমিটি। এখানে প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক ১ বছরের অধিক মেয়াদের কোনো কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে অনুরূপ দণ্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন।’ উপকমিটিকে সংশোধন প্রস্তাবে আইন থেকে ‘তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত’ শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছে।

ফলে উল্লেখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন সাপেক্ষে আইনটি চূড়ান্ত হলে সরকারি কর্মচারীরা বড় দুটি সেভগার্ড ভোগ করবেন। এর একটি হল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দুদক গ্রেফতার করতে পারবে না এবং এক বছরের বেশি কারও সাজা হলে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা যাবে না।

এছাড়া উপকমিটি বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের ধারায় ইতিবাচক একটি সংশোধন প্রস্তাব এনেছে। এ ধারার ক্ষমতাবলে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যে কোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনোরূপ কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে।

তবে শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রস্তাব করেছে, ‘কোনোরূপ কারণ না দর্শাইয়া’ শব্দসমূহের পরিবর্তে ‘কারণ দর্শানোপূর্বক’ শব্দসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। এটি আসলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

সে হিসেবে এই প্রস্তাব যদি সন্নিবেশিত হয় তাহলে সরকারি চাকরিজীবীরা এই কালো আইনের কবল থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন। কারণ দর্শানো চিঠির জবাব সরকারের কাছে গৃহীত না হলেও অন্তত এ সুযোগটি তাদের কাছে একটি সান্ত্বনার জায়গা হিসেবে প্রতীয়মান হবে।

উপকমিটি প্রস্তাবিত আইনের ৫৪ ধারায় আরও একটি ইতিবাচক সংশোধন প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এ আইনের উপধারা (১)-এ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি জনস্বার্থে কোনো কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসর প্রদানের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবেন।

সূত্র- যুগান্তর