Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আইনস্টাইনের তত্ত্ব পরিপূর্ণ করার দাবী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওসমান গনি তালুকদার এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুসফিক আহমদ দাবি করছেন, তাঁরা যৌথভাবে গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন ও ডি-ব্রগলির তত্ত্বের সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের ১৫ বছরের গবেষণালব্ধ তত্ত্বের মাধ্যমে তাঁরা পেয়েছেন তিনটি সমীকরণ ও
কিছু মৌলিক ধ্রুব সংখ্যা। আর এই সমীকরণ ও ধ্রুব সংখ্যা দিয়ে পূর্ণতা লাভ করবে বা সম্প্রসারিত হবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার মতবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো দাবি করা হয়, উপপারমাণবিক কণা নিউট্রিনোর আলোর গতিকে অতিক্রম করার সাম্প্রতিক এক পরীক্ষার খবরে বিশ্বে যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, তার ইঙ্গিত আজ থেকে ১০ বছর আগেই অধ্যাপক ওসমান গনি তালুকদার তাঁর একটি বইয়ে দিয়েছিলেন। বইটি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছিলেন, নিউট্রিনো নামের একটি বস্তুকণিকা আছে, যা আইনস্টাইনের সূত্রকে মানছে না। ওই সময়ে সংবাদপত্রেও তাঁর এই দাবির কথা প্রকাশিত হয়েছিল।
গতকাল শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জুবেরি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষক ওসমান গনি তালুকদার এসব তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, আগামী ডিসেম্বরে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের এই দাবি ও তত্ত্ব প্রমাণ করবেন। এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ওসমান গনি বলেন, তিনি ও মুসফিক আহমদ ১৯৯৬ সাল থেকে আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি (আপেক্ষিকতা) মতবাদ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। প্রথমদিকে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলাদা কাজ শুরু করেন। তবে একটা ব্যাপারে দুজনেই একমত ছিলেন যে বস্তুকণিকার বেগ আলোর চেয়ে বেশি হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের কিছু বিদ্যমান তত্ত্বের ভিত্তিতেই তাঁরা এই ধারণা পান। এই ধারণাগুলো তাঁরা প্রবন্ধ আকারে বিভিন্ন জার্নালে পাঠালেও তা প্রকাশিত হয়নি। পরে অধ্যাপক ওসমান গনি নিজ উদ্যোগে ২০০১ সালে ‘অ্যান অল্টারনেটিভ অ্যাপ্রোচ টু দ্য রিলেটিভিটি’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেন।
বইটি প্রকাশের সময় অধ্যাপক ওসমান গনি একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, বস্তুর বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হতে পারে এবং নিউট্রিনোর কিছু ব্যবহার আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির মতবাদকে লঙ্ঘন করে। দেশের শীর্ষ দুটি দৈনিকে তাঁর এই বক্তব্য ছবিসহ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি অধ্যাপক মুসফিক আহমদ ও অধ্যাপক ওসমান গনির বেশ কিছু প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এই দুই গবেষক যৌথভাবে ঘোষণা করেন, এ পর্যন্ত আইনস্টাইনের মতবাদগুলো ছিল অসম্পূর্ণ। আইনস্টাইন পাঁচটি সমীকরণ এবং একটি মৌলিক ধ্রুব সংখ্যা দিয়ে গেছেন। আর তাঁদের নির্ণিত তিনটি সমীকরণ এবং কয়েকটি ধ্রুব সংখ্যার মাধ্যমে আইনস্টাইনের মতবাদ সম্প্রসারিত হবে এবং সেই সম্প্রসারিত রূপই একবিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি হবে বলে তাঁরা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুসফিক আহমদ সম্পর্কে অধ্যাপক ওসমান গনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মুসফিক আহমদ আমার শিক্ষাগুরু। আমাদের এই গবেষণা মূলত মুসফিক আহমদের একটি এবং আমার নিজের একটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে।’
অধ্যাপক ওসমান গনি আরো বলেন, এর বাইরেও মুসফিক আহমদের আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা আছে, যার মধ্যে তিনি একটির নাম দিয়েছেন ‘রেসিপ্রোকাল সাইমেট্রি’। এ-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রবন্ধ পর্যবেক্ষকরা অত্যন্ত উঁচুমানের বলে মূল্যায়ন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে দুই গবেষক ছাড়া রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান, রেজিস্ট্রার এম এ বারী, প্রক্টর চৌধুরী মুহম্মদ জাকারিয়া, ছাত্র উপদেষ্টা গোলাম সাবি্বর সাত্তার তাপু, জনসংযোগ কর্মকর্তা চিত্তরঞ্জন মিশ্রসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই দুই গবেষক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।’ গবেষণার কাজে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও উপাচার্য আশ্বাস দেন।