Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার কি বাংলাদেশীদের জন্য সঙ্কুচিত হচ্ছে?

korea-bangladeshi
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে এমপ্লয়মেন্ট পয়েন্ট সিস্টেম নিয়ে মতবিনিময়ে করছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সরকারিভাবে কয়েক হাজার কর্মী কাজ করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, যার খরচও হয় অত্যন্ত কম, এক লাখ টাকার মধ্যে। অথচ সেখানে চাকরির বেতন হয় আশি হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। ফলে এই চাকরির প্রতি আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের অনেক তরুণের।

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা কি? নতুন কোন সম্ভাবনা কি তৈরি হচ্ছে? চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত-

chardike-ad

যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী নিয়োগ হয়: একসময় বাংলাদেশের চারটি কোম্পানির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী নিয়োগ হলেও, ২০০০ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট (এইচআরডি) মাধ্যমে কোরিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এখন এই নিয়োগটি হয় রিক্রুটমেন্ট পয়েন্ট সিস্টেমের ভিত্তিতে। অর্থাৎ আবেদনকারী কোরিয়ান ভাষা, কর্মদক্ষতা, শারীরিক যোগ্যতা বৃত্তিমূলক কাজের যোগ্যতা, প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ ও চাকরির অভিজ্ঞতা- ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়নের ভিত্তিতে পয়েন্ট পান। সেসব পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম দফা প্রার্থী বাছাই করা হয়।

এরপর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট ভিত্তিক দক্ষতা পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার কর্মী বাছাই হয়। দুই রাউন্ড মিলিয়ে সর্বাধিক নম্বর পাওয়া ব্যক্তিদের চূড়ান্ত করা হয়।

কোরিয়ার নিয়োগ দাতাদের এসব তথ্য সরবরাহ করে উপযুক্ত কর্মী খুঁজে পেতে সহায়তা করা হয়। পরীক্ষা, যাচাই বাছাইয়ের পরে কর্মীদের এই তালিকা দেয়া হয় দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। সেখান থেকে তাদের চাহিদা মতো কর্মী বেছে নেন।

বাছাইকৃত কর্মীদের মেয়াদ থাকে দুই বছর। এর মধ্যে কোরিয়ান কোম্পানি তাদের বেছে না নিলে পুনরায় পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়। বাছাই হওয়ার পর বিমান ভাড়া, বোয়েসেলের ফিসহ সবমিলিয়ে একজন কর্মীর খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২২১৫জন কর্মী, ২০১৮ অর্থবছরে ২০১২জন কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়েছেন। ২০১৯ সালে তিন হাজার কর্মীর চাহিদার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, শেষপর্যন্ত কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী অন্তত দুই হাজার কর্মী পাঠানো যাবে।

south-korea-worker
দক্ষিণ কোরিয়ার কারখানায় বিভিন্ন দেশের অনেক শ্রমিক কাজ করেন, যাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশিরাও

দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী নিয়োগের এখন কী অবস্থা?: দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ওমর ফারুক বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা কমছে। একসময় বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম দিকে থাকলেও এখন তাদের হটিয়ে নেপাল, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারের কর্মীরা জায়গা দখল করে নিয়েছে।

এর কারণ হিসাবে তিনি বলছেন, বাংলাদেশিরা অল্প সময়ের মধ্যে ঘনঘন চাকরি পরিবর্তন করেন, ফলে অনেক নিয়োগদাতা খুশী নন। এছাড়া অনেক কর্মীর মালিকদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া, খাবারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যার সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে সার্টিফিকেট জালিয়াতির সমস্যা।

তিনি জানাচ্ছেন, পয়েন্ট সিস্টেমের কারণে পূর্বের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে কোরিয়ায় পরবর্তী ধাপের ভিসা পেতে সুবিধা হয়, যার ফলে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা যায়। এই সুযোগ নিতে বাংলাদেশি কিছু কর্মী দেশ থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করে নিয়ে এসেছিলেন, যা কোরিয়ান ইমিগ্রেশনে ধরা পড়ে। এসব অভিযোগে ৪০জনের মতো কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠান অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে তিনি জানান।

ওমর ফারুক জানান, এখন খরচ কমাতে অনেক প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তাদের কারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ সেখানে উৎপাদন খরচ কম। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প খাতেও। এর ফলে এখানকার শ্রমবাজারে বিদেশী কর্মীদের চাহিদা কমেছে। ফলে বাংলাদেশিসহ অনেক বিদেশী কর্মী এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় বেকার রয়েছেন বলে তিনি জানান।

কী বলছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা?: বোয়েসেলের কর্মকর্তা নূর আহমেদ বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছুদিন ধরে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সংখ্যা একটু কমে গেছে, নেপাল ও অন্য দেশের কর্মীদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা আরো বাড়ানোর।

দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ব্যাপারে নিয়োগ দাতাদের অনাগ্রহের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ”এরকম একটি কথা আমাদের কানেও এসেছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের নানাভাবে বোঝানো, পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে কোনরকম নেতিবাচক মনোভাব তৈরি না হয়।”

তবে বাংলাদেশী কর্মী বেশি নেয়া না নেয়ার বিষয়টি যেহেতু শেষপর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলোর ওপরেই নির্ভর করে, সুতরাং এক্ষেত্রে সরাসরি বাংলাদেশি কর্মকর্তা বা কোরীয় কর্মকর্তাদের কিছু করার সুযোগ নেই। বরং সেখানে বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষতা ও আচরণ দিয়ে তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশের এই বাজারটি আরো বিস্তৃত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছেন, খাবার নিয়ে কর্মীদের একটি অভিযোগ অনেকদিন ধরেই আসছে। কারণ সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে থাকে। ফলে তাদের মতো খাবার বাংলাদেশি কর্মীরা খেতে পারেন না। এক্ষেত্রেও আমরা কর্মীদের বুঝিয়েছি যেন উন্নত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা নিজেদের মানিয়ে নেন। বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সেখানে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

সৌজন্যে- বিবিসি বাংলা