
রোহিঙ্গা সংকটকে শুধু বাংলাদেশের সীমিত ইস্যু হিসেবে দেখলে ভুল হবে বলে সতর্ক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তার মতে, আগামী ৭–৮ বছরের মধ্যে এটি পুরো অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ও সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ‘বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্স ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “প্রায় আট বছর ধরে লাখো তরুণ-তরুণী আশ্রয়শিবিরে বেড়ে উঠছে কোনো আশার আলো ছাড়াই। এরা একসময় স্থিতাবস্থা মেনে নেবে না, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। আর ৭–৮ বছর পর তা কেবল বাংলাদেশের নয়, আঞ্চলিক বড় সমস্যায় রূপ নেবে।”
ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বজনমত পাল্টাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ মনে করছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনে অপরাধ করছে। এমনকি বহু ইহুদি বুদ্ধিজীবীও এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন।
অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের চরিত্রও বদলাচ্ছে। আগে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করাই মূল লক্ষ্য ছিল, এখন ভারত ও চীন প্রায় একই ভাষায় কথা বলছে। তবে এটিকে স্থায়ী ধরা যাবে না, কারণ মৌলিক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এখনো অপরিবর্তিত।
এশীয় প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “২১ শতক যেমন এশিয়ার, ২২ শতক আরও বেশি এশিয়ার হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে জনসংখ্যাগত সুবিধা। পরবর্তী শতাব্দীতে আফ্রিকার সম্পদ নিয়ন্ত্রণ নিয়েও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে।”
দেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন আশাবাদী হয়ে বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মই পরিবর্তন ঘটাবে। তারা ১৯৯১ বা ১৯৯৪ সালের রাজনীতিতে আর ফিরে যাবে না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখবে, হয়তো কঠিনভাবে, তবে শেষ পর্যন্ত রাজনীতি কম সহিংস হবে। আগামী ১০–১৫ বছরের মধ্যে এ পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।”
গণশিক্ষার মান নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনেক শিক্ষার্থী মাতৃভাষাতেও সঠিকভাবে পড়তে পারে না। গত ১৫–২০ বছরের এই পিছিয়ে পড়া কাটিয়ে ওঠা জরুরি।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণাভিত্তিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে সীমাবদ্ধ না থেকে জ্ঞানচর্চা বিস্তৃত করতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সবকিছুর সঙ্গেই রাজনীতি জড়িত। তবে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বরং প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা এবং তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ভবিষ্যতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।”





























