Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলা ভাষার রাষ্ট্র নির্মাণের মাইলফলক মহান একুশ

dr mahbub ullahরাষ্ট্রভাষার আন্দোলন থেকে বাংলা ভাষার রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে দু’দশকেরও কম সময় লেগেছিল। ব্রিটিশ শাসনের অন্তিম লগ্নে ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নটি যখন চূড়ান্ত মীমাংসার পথে এবং ব্রিটিশ শাসিত ও ঔপনিবেশিক ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি যখন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, তখন থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল। বাংলা ১৩৫০ সালের মাসিক মোহাম্মদীর কার্তিক সংখ্যায় আবুল মনসুর আহমেদ তার ‘পূর্ব-পাকিস্তানের জবান’-এ লিখেছিলেন, ‘অথচ উর্দু নিয়ে এই ধস্তাধস্তি না করে আমরা সোজাসুজি বাংলাকেই যদি পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় ভাষারূপে গ্রহণ করি, তবে পাকিস্তান প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা মুসলিম বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় নিজেরাই পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও শিল্পগত রূপায়ণে হাত দিতে পারব। আমাদের নিজেদের বুদ্ধি, প্রতিভা ও জীবনাদর্শ দিয়েই আমাদের জনসাধারণকে উন্নত, আধুনিক জাতিতে পরিণত করব। জাতির যে অর্থ, শক্তি, সময় ও উদ্যম উর্দু প্রবর্তনে অপব্যয় হবে, তা যদি আমরা শিক্ষা-সাহিত্যে, শিল্প-বাণিজ্যে নিয়োজিত করি তবে পূর্ব-পাকিস্তানকে আমরা শুধু ভারতের নয়, সমগ্র মুসলিম জগতের এমনকি, গোটা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করতে পারব।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকেও আদর্শ মুসলিম ভাষা ও মুসলিম সাহিত্যে পরিণত করতে পারব।’ একই প্রবন্ধে তিনি আরো লিখেছিলেন, “বাংলার মুসলমানদের মাতৃভাষা বাংলা হবে কি উর্দু হবে, এ-তর্ক খুব জোরে-শোরে একবার উঠেছিল। মুসলিম বাংলার শক্তিশালী নেতাদের বেশির ভাগ উর্দুর দিকে জোর দিয়েছিলেন। নবাব আবদুর রহমান মরহুম, স্যার আবদুর রহিম, মৌ. ফজলুল হক, ডা. আবদুল্লাহ সুহরাওয়াদী, মৌ. আবুল কাসেম মরহুম প্রমুখ প্রভাবশালী নেতা উর্দুকে বাঙালি মুসলমানের ‘মাতৃভাষা’ করবার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুসলিম বাংলার সৌভাগ্য এই যে, উর্দু-প্রীতি যাদের বেশি থাকবার কথা, সেই আলেম সমাজই এই অপচেষ্টায় বাধা দিয়েছিলেন। বাংলার আলেম সমাজের মাথার মণি মওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁ, মওলানা আবদুল্লাহেল বাকী, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, উর্দু-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব করেছিলেন। এঁদের প্রয়াসে শক্তি যুগিয়েছিলেন মরহুম নবাব আলী চৌধুরী সাহেব। সে লড়াই-এ এঁরাই জয়লাভ করেছিলেন। বাংলার ওপর উর্দু চাপাবার সে-চেষ্টা তখনকার মতো ব্যর্থ হয়।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করবার লড়াই আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসের চেয়েও পুরনো। এর পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো। সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানেও ভাষা বিতর্কের অবসান হলো না। পাকিস্তান আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ উর্দু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশের জনগণের মাতৃভাষা ছিল না। তবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় ভারতের উত্তর ও মধ্য প্রদেশের যেসব এলিটরা মোহাজের হিসেবে পাকিস্তানে এসেছিলেন, তাদের মাতৃভাষা ছিল উর্দু। বস্তুত পাকিস্তান ভারতের মুসলিম প্রধান অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত হলেও এটি ছিল একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র। একইভাবে ভারতও একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র। ভারত বহু জাতির বৈচিত্র্য সত্ত্বেও একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পেরেছিল এর সংবিধানের ফেডারেল বৈশিষ্ট্যের কারণে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তার কর্মসূচিতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব করেছিল অনেক আগেই। জওহরলাল নেহেরু ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’র কথা বললেও ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অন্তর্গত রাজ্যগুলোর সীমারেখা নির্ধারণে দারুণ অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। এর মধ্যে তিনি সংকীর্ণ মানসিকতা দেখতে পেয়েছিলেন। আজও ভারতে নতুন নতুন রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। পাকিস্তানের জনগণের কোনো অংশের ভাষা উর্দু না হলেও কেবলমাত্র উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, এমন চিন্তার উদ্ভব কেন ঘটল, সে সম্পর্কে গভীর কোনো গবেষণা হয়নি।

chardike-ad

পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেখা গেল, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত পোস্ট-কার্ড ইনভেলপ ও মানি-অর্ডার ফর্মে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ঠাঁই করে নিয়েছে। বাংলা ভাষার লেশমাত্র কোথাও নেই। বিষয়টি বাঙালি তরুণদের, বিশেষ করে ছাত্রসমাজের দৃষ্টি এড়ায়নি। অচিরেই উর্দু যে জেঁকে বসতে চলেছে, তা বুঝতে সচেতন তরুণদের কষ্ট হয়নি। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক আবদুল মতিন বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ এ থেকেই অনুভব করেছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। আন্দোলনের চরম মুহূর্তটি এসেছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। সেদিন পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালিয়েছিল। এর ফলে বরকত, সালাম, রফিক ও জব্বার শহীদ হয়েছিলেন।

শহীদের রক্তদান বৃথা যায়নি। তাদের এ আত্মত্যাগের ফলেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তরে। ওই সময় আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আমার স্কুলটি ছিল একটি প্রশাসনিক থানার হেডকোয়ার্টারে। এ স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হতো। আমাদের ক্লাস চলছিল এমন একটি সময়ে একটি মিছিল স্কুলের গেটে এসে পৌঁছাল। মিছিলকারীরা আমাদেরকে তাদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দিতে আহ্বান জানালেন। মুহূর্তের মধ্যে স্কুলের সব ছাত্র মিছিলে শামিল হলো। মিছিল এগিয়ে চলল। তখনো জানতাম না— কিসের জন্য এই মিছিল? মিছিল থেকে স্লোগান উঠল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের কল্লা চাই।’ তখনই ওই কচি বয়সে বুঝতে পারলাম, কেন সে মিছিল? মিছিল শেষে বাসায় ফিরে এলাম। মিছিলটি থামিয়ে দিতে কোনো প্রকার পুলিশি হস্তক্ষেপ হয়নি সেদিন। বিকালে আমার পিতার অফিসের সম্মুখভাগটি ছিল প্লেনশিটে বেড়া দেয়া। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই বেড়া পোস্টার র্সাঁটার জন্য খুবই সুবিধাজনক। বিকালে দেখলাম ওই বেড়ায় একটি হ্যান্ডবিল সেঁটে দেয়া। সে হ্যান্ডবিলে ছিল শহীদ বরকতের লাশের ছবি এবং লেটার প্রেসে ছাপানো দু’একটি স্লোগান এবং ছবির ক্যাপশন। সে সময় মুদ্রণ শিল্প ছিল অত্যন্ত অনুন্নত। ছাপার অস্পষ্টতা সত্ত্বেও অনেককে কৌতূহল নিয়ে ওই হ্যান্ডবিলটি পড়তে দেখেছি। লাশের ছবি মানুষের মধ্যে এক বিষাদময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এভাবেই রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন ছাড়িয়ে পড়েছিল সবখানে। উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হলে পূর্ব বাংলার শিক্ষিত তরুণদের পক্ষে সরকারি চাকরি করা সম্ভবপর হবে না— এ আশঙ্কা সবাইকে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। দেশে তখন শিক্ষিত তরুণদের জন্য সরকারি চাকরি করাই একমাত্র স্বপ্ন। কারণ বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের পরিবেশ তখনো গড়ে ওঠেনি। শুধু মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই নয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নটিও ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করেছিল। শাসক-গোষ্ঠী, বিশেষত মুসলিম লীগ সরকার এ বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। মুসলিম সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে উর্দুই হবে একমাত্র বাহন— এ অলীক চিন্তা তাদেরকে অন্ধ করে দিয়েছিল। আবুল মনসুর আহমেদের ‘পূর্ব-পাকিস্তানের জবান’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারি এমন ভাবনা মুসলিম এলিটদের একাংশের মধ্যে পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্ব থেকেই ছিল। মুসলিম লীগ এ ধরনের এলিটদের দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিল।

বাংলা ভাষার বয়স নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। বাংলা ভাষায় রচিত ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’কে এ ভাষার আদি লিখিত রূপ বলে মনে করা হয়। চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতসমাজে মতপার্থক্য আছে। ড. শ্রী সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের অনুমান— এগুলোর রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। তার এ মত কলকাতার পণ্ডিতরা বিনা বাক্যে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রাহুল সাংকৃত্যায়ন ভিন্ন মত পোষণ করেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমাণ করেছেন, লুই পাদ এবং সরোহ পাদ— এ দুজন প্রাচীন সিদ্ধাচার্য রাজা ধর্মপালের সময় (৭৬৯-৮০৯ খ্রি.) জীবিত ছিলেন। ড. শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেছেন চর্যাপদে আনুমানিক ৬৫০-১১০০ খ্রিস্টাব্দের ভাষা লিপিবদ্ধ হয়েছে। তার মতে, বাংলা সাহিত্যের উত্পত্তিকাল সপ্তম শতক এবং ‘বাঙ্গালা ভাষা ইহার অন্তত একশত বত্সর পূর্বের হইবে।’ অর্থাৎ ভাষার উত্পত্তি কালের সঙ্গে ভাষায় রচিত গ্রন্থের একটি সময় ব্যবধান থাকে। আমাদের রাজনীতির মঞ্চে হাজার বছরের বাঙালি বলে যে দাবি উচ্চারিত হয়, তার একটা ভিত্তি আছে। তবে বাঙালি পরিচয়ের জাতি হাজার বছর আগে গঠিত হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা আছে। মমতাজুর রহমান তরফদার মনে করেন, প্রাক-মুসলিম আমলে বাঙালি লোকগোষ্ঠী গঠনের জন্য যে উপাদানগুলো ক্রিয়াশীল ছিল, তা তুর্কি আক্রমণের দরুন অনেকটা বাধা হয়েছিল। তুর্কি আফগান পর্বের প্রথমদিকে বহু দিন পর্যন্ত কোনো স্থিতিশীলতা ছিল না। স্থিতিশীলতাহীন অনিশ্চয়তার পরিবেশ কোনো সমাজেই সামাজিক উপাদানগুলো দানা বাঁধতে চায় না। কিন্তু এ কথাও সর্বাংশে সত্য নয়, আপাত নিশ্চলতা কিংবা অস্থিতিশীলতার মধ্যেও সমাজ আপন গতিতে বিবর্তিত-পরিবর্তিত হতে থাকে। সেজন্যই মনে করা হয়, চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি তুর্কিদের শাসনকালে জাতি বা ঘধঃরড়হ না হোক একটি ভাষাভিত্তিক লোকগোষ্ঠী গঠনের জন্য প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছিল। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, তুর্কিদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও রাজনীতি এ নতুন পরিস্থিতি উদ্ভবের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি দিল্লির রাজনৈতিক আধিপত্য থেকে বাংলার শৃঙ্খল মুক্তি এবং গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভিত্তি পত্তন ছিল সুলতান ইলিয়াস শাহের অমর কীর্তি। স্বাধীন সালতানাতের ২০০ বছরে একটি অঞ্চলভিত্তিক, ভাষাভিত্তিক লোকগোষ্ঠী গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর সৃষ্টি ও সমন্বয় ঘটেছিল। এ প্রথমবারের মতো রাঢ়-গৌড়-বরেন্দ্র-বঙ্গ-সমতট-হরিকেল একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাজশক্তির অধীনে একত্রিত হলো। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে গড়ে উঠল রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপযোগী প্রশাসনিক উপকাঠামো।

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের ভূমি গঠন এবং জলবায়ু এ অঞ্চলের জনগণের সমাজ ও অর্থনীতিকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন নরগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে স্বাভাবিক নিয়মে যে লোকগোষ্ঠী বা ঢ়বড়ঢ়ষব সৃষ্টি হয়েছে, তার একটি অভিন্ন চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে। সুলতানি আমলের রাষ্ট্রনীতি এ লোকগোষ্ঠীর নানা অংশকে কাছাকাছি আসতে সহায়তা করেছিল। ইলিয়াস শাহীর শাসনের সময় নানা জনপদে বিভক্ত লোকগোষ্ঠী একই শাসন ব্যবস্থার অধীনে একত্রিত হয়। এ একত্রিত অঞ্চল তখন থেকেই ‘বাংলা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রাক-মোগল যুগেই ‘যে বর্তমানকালের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের একটি লোকগোষ্ঠীর ও একটি ভাষা-ভূগোলভিত্তিক সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এ বাঙালি লোকগোষ্ঠী একটি ঢ়বড়ঢ়ষব বা সংগঠিত লোকগোষ্ঠীই ঘধঃরড়হ বা জাতি নয়’ লোকগোষ্ঠী থেকে জাতিতে উত্তরণ আরেকটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল। ভাষা আন্দোলন এ জাতি সৃষ্টিতে একটি মূল্যবান মাইলফলক। এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের মধ্যে বসবাসকারী লোকগোষ্ঠী নিঃসন্দেহে একটি জাতি। তবে এ ভূখণ্ডের বাইরেও বিশাল বাংলা ভাষাভাষী লোকগোষ্ঠী আছে, কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো রাষ্ট্রীয় সত্তা নেই। অনাগত ভবিষ্যতে এসব বাংলা ভাষাভাষী লোকগোষ্ঠী তাদের বাঙালি পরিচিতি ধরে রাখতে পারবে কিনা, সেটা দেখার বিষয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি এ ভূখণ্ডের বাঙালিদেরকে স্বকীয় সত্তায় উদ্ভাসিত করেছে। এ রাষ্ট্রসত্তা নির্মাণে মহান একুশের ভূমিকা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। মহান একুশে এ জাতিকে অভিন্ন আবেগের সূত্রে গ্রোথিত করেছে। একুশ সে কারণেই চির অম্লান।

লেখক: সাবেক অধ্যাপক

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়