Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তুরস্ক থেকে বলছি

তুরস্কের আনাদলু ইউনিভার্সিটিতে ১২ জনের মতো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডিতে পড়ছেন। বাংলাদেশের বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোয় তারা আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। উদ্দেশ্য বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া

‘মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসাটা সবসময়ের। আর তা যেন বিদেশে পড়তে এসে ভিন্ন মাত্রায় অনুভব করা। আমার দেশের ভালো সংবাদগুলো শুনে যখন সবার সামনেই ভিনদেশী শিক্ষার্থীরা প্রশংসা করে, তখন বেশ ভালো লাগে এটা ভেবে যে, আমি একজন বাংলাদেশী। আবার যখন বাংলাদেশের কোনো নেতিবাচক খবর শুনি, তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণটা একই, মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা। প্রিয় বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু শুনতে একদমই মন চায় না।’ বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের ফরিদুর রেজা। পড়ছেন তুরস্কের আনাদলু ইউনিভার্সিটিতে।

chardike-ad

turkeyএখানে তার সকাল শুরু হয় এক টুকরো তার্কিশ সাদা ব্রেডের সঙ্গে মাখন আর মধু দিয়ে। সঙ্গে দুটি ডিম আর এক কাপ কফি। তার্কিশ খাবার যেমন— ব্রেড, কাবাব, মুরগি, তার্কিশ শর্মা, গরুর কিমা প্রভৃতি দিয়েই সারতে হয় দুপুর ও রাত। সপ্তাহে পাঁচদিন ক্লাস থাকে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত, লম্বা সময়। প্রতিটি ক্লাসে ৩ ঘণ্টার মাঝে ২০ মিনিটের বিরতি। দেরি করলে আর ক্লাসে ঢোকার সুযোগ নেই। ক্লাস ছাড়া বাকি সময় কাটে লাইব্রেরিতেই।

একটু-আধটু লেখালেখি, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ আর বাংলাদেশীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেই সাপ্তাহিক অবসরের দিনগুলো কাটে ফরিদুর রেজার। ১২ জনের মতো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডিতে পড়ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসরে সবাই মিলিত হন ব্যাট-বল হাতে। ক্রিকেট ফুটবলপ্রেমী তার্কিশদের কাছে ভিন্ন গ্রহের খেলা। ফরিদুর রেজা বলেন, ‘যখন খেলা চলে, তখন ওরা অবাক হয়ে দেখে। অবশ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট বেশ উপভোগ করে। তারা দু-একজন খেলতেও নেমে যায় বাংলাদেশীদের সঙ্গে।’

এখানে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশের শিক্ষার্থী পড়ছেন বিভিন্ন বিষয়ে। বাংলাদেশের বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। সেখানে বাংলাদেশের পরিচায়ক বিভিন্ন সংস্কৃতির ছবি আর কিছু বাস্তব শিল্পের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকে। সব দেশের সংস্কৃতি উপস্থাপনের জন্য অনুষ্ঠানও হয়। সেখানেও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন আর বস্ত্রশিল্প নিয়ে বিদেশীদের কৌতূহল বেশ লক্ষ করা যায় বলে জানান ফরিদুর রেজা।

তুরস্কের উদ্দেশে রেজা দেশ ছেড়েছিলেন ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে। পরে তুরস্ক সরকারের বৃত্তি পেয়ে যান প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়ার জন্যই। স্কলারশিপে মাসিক ৬০০ লিরা পান, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৮ হাজার টাকা। টিউশন ফি, হল সুবিধা, চিকিত্সা বীমাসহ তার্কিশ নাগরিকদের মতোই সব সাধারণ সুবিধা পাওয়া যায়। বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে এ স্কলারশিপ দেয়া হয়। প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ওয়েবসাইটের (www.turkiyeburslari.gov.tr) মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া চলে। আবেদন যাচাইয়ের পর দূতাবাসে সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। আইএলটিএস না থাকলেও আবেদন করা যায়। বণিকবার্তা থেকে।