
পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যেই দেশটিতে অন্তত ৩৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশে।
শনিবার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) প্রতিবেদনে জানানো হয়, খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৭ জনে। সেখানকার বুনের জেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।।
প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৪টি ঘরবাড়ি ধসে গেছে। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে নয়জন ও উত্তরাঞ্চলীয় গিলগিট-বালতিস্তানে আরও ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি এলাকা দুর্যোগপ্রবণ ঘোষণা করা হয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বুনের এলাকায় ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আজিজুল্লাহ নামের এক বাসিন্দা। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, “এমন বন্যা হয়েছিল— যেন কিয়ামত নেমে এসেছে। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনলাম, মনে হলো পাহাড় ধসে পড়ছে। বাইরে বের হয়ে দেখি, পুরো এলাকা ভেসে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “পানির তোড়ে মাটি ধসে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল, মৃত্যু এই বুঝি আমাকে গ্রাস করবে।”
খাইবার পাখতুনওয়ার প্রধানমন্ত্রী আলী আমিন গাদাপুর জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে বাজাউরে একটি এম-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। তিনি আরও জানান, খাইবার পাখতুনওয়ায় একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতশাসিত কাশ্মীরেও গত শুক্রবার হিমালয়ের পাদদেশের একটি গ্রামে ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ৬০ জন মারা গেছেন। আরও কয়েকজন পানির স্রোতে ভেসে গেছেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টিতে মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হয়। এবারের বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করে পাঞ্জাব প্রদেশে। দেশটির এই প্রদেশে গত বছরের তুলনায় এবার ৭৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ বছর বর্ষাকালে আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণহানি রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ক্রমেই চরমপন্থী হয়ে উঠছে। এর ফলে কোথাও অতি বৃষ্টি, আবার কোথাও তীব্র খরা দেখা দিচ্ছে।
সূত্র: ডন নিইজ






































