পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে টুপি ও লুঙ্গি পরে ট্রেনে হামলা-ভাঙচুরকালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বিজেপির এক কর্মী ও তার পাঁচ সহযোগী। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ভিন্ন রূপ দিতে বিজেপির লোকজন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সেই ছয় জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা-ব্যানার্জির বক্তব্যে উঠে আসে। মমতা বলেন, বিজেপি তাদের কর্মীদের জন্য টুপি কিনছে, যাতে সহিংসতা ঘটিয়ে সেসময়কার ছবি তুলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর দায় চাপাতে পারে।
সম্প্রতি মোদির বিজেপি সরকার বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস করলে এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তাল হয় পশ্চিমবঙ্গও। ক্রমেই গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ দমনে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটক-উত্তর প্রদেশসহ দেশটির আটটি রাজ্যের ১৩টি শহরে বিক্ষোভ করে জনতা। এরমধ্যে কর্ণাটক ও উত্তর প্রদেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ‘নির্যাতিত’ হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থি।
এই আইনের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার পাশাপাশি সোচ্চার হয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, বামপন্থি বিভিন্ন দলও। পশ্চিমবঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতাই নেমে গেছেন নাগরিকত্ব আইনবিরোধী মিছিলে। কিন্তু এ রাজ্যে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সহিংসতার খবর দিতে থাকে সংবাদমাধ্যম।
তবে বিক্ষোভ-সহিংসতার কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিক্ষোভকারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন, ‘কারা সহিংসতা ছড়াচ্ছে তা পোশাক দেখেই বোঝা যায়।’
ঐতিহাসিকভাবে মুর্শিদাবাদে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি। বিজেপির সাম্প্রদায়িক নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সেখানে বিক্ষোভও চলছে বেশি। সেই বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করে নরেন্দ্র মোদির সুরেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যারা বিক্ষোভ করছে তারা সবাই ‘লুঙ্গি সন্ত্রাসী’।
এরমধ্যেই মুর্শিদাবাদে মুসলিম বেশ ধরে সহিংসতার সময় বিজেপির ছয় জন ধরা পড়ার বিষয়টি জানালেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় চলছে। নাগরিকরা বলছেন, নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বেকায়দায় ফেলতে ফন্দি আঁটছে বিজেপির নেতাকর্মীরা। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করতে তারা এ ধরনের কাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে প্রমাণ হয়ে গেছে।