Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির তলায় বাংলাদেশ

 সিউল, ১৭ জুন ২০১৪:

উন্নয়ন ও অগ্রগতির দৌড়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে সরকার। এজন্য অন্যান্য খাতের চেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। দেশকে একটি প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর সমাজে রূপান্তরে চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি। কিন্তু আনন্দের খবরগুলো এখনো কিছুটা দূরে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সমীক্ষা বলছে, একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির মাপকাঠিতে বাংলাদেশ এখনো এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সবার নিচের দিকেই আছে।

chardike-ad

downloadসংস্থাটির সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইনোভেটিভ এশিয়া: অ্যাডভান্সিং দ্য নলেজ বেজড ইকোনমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনমতে, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম। আর ১০-এর মধ্যে প্রাপ্ত স্কোর ১ দশমিক ৪৯। যদিও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় স্কোর ৪ দশমিক ৩৯।

৮ দশমিক ৭৭ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তাইওয়ান। শীর্ষ পাঁচে রয়েছে যথাক্রমে হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। শূন্য দশমিক ৯৬ স্কোর নিয়ে তালিকায় সর্বশেষ অবস্থান মিয়ানমারের। বাংলাদেশের উপরে ২৬তম স্থানে রয়েছে নেপাল, ২৫তম কম্বোডিয়া ও ২৪তম লাওস। দেশগুলোর স্কোর যথাক্রমে ১ দশমিক ৫৮, ১ দশমিক ৭১ ও ১ দশমিক ৭৫।

চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে সূচকটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলো হলো— অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা (রেজিম), শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি, তথ্য অবকাঠামো এবং উদ্ভাবনী ব্যবস্থা। প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সূচকে ১০-এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ১ দশমিক ৫১। এছাড়া শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি সূচকে ১ দশমিক ৭৫, তথ্য অবকাঠামোয় ১ দশমিক শূন্য ১ ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থায় ১ দশমিক ৬৯।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় ভয়াবহ রকম পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সে চিত্রই উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে যে স্তম্ভগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে শুধু শিক্ষায় কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। যদিও তা প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে। উচ্চশিক্ষার চিত্র খুবই করুণ। গবেষণা ব্যবস্থায়ও খারাপ অবস্থা। শুধু কৃষি গবেষণায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনীতি নলেজ বেজড না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সময় এসেছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সূচক তৈরিতে অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা বিকাশে নতুন ও বিদ্যমান জ্ঞানের যথোপযুক্ত ব্যবহারে বাধাগুলো বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা, মাধ্যমিকে মোট ভর্তির ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মোট ভর্তির হারও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন, গবেষণা কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, পরামর্শক ও প্রযুক্তি বিকাশে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদান পরিমাপ করা হয়েছে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর বেশির ভাগেই বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, সর্বজনীন শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে গিয়ে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা উপেক্ষিত থেকে গেছে। বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার অবস্থাও নিম্নমুখী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি। পাশাপাশি দেশের শাসন ব্যবস্থা ও আইনের শাসনও প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে তথ্য অবকাঠামোয় প্রতি হাজারে টেলিফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বিবেচনা করা হয়েছে। উদ্ভাবনী ব্যবস্থায় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে স্বত্বাধিকার ব্যবহার ফি প্রদান ও আদায়ের পরিমাণ, কারিগরি জার্নালে লেখা প্রকাশের অনুপাত (প্রতি ১০ লাখে) ও জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত পেটেন্টের অনুপাত (প্রতি ১০ লাখে)।

ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য মোস্তাফা জব্বার এ প্রসঙ্গে বলেন, তথ্য অবকাঠামোয় বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। টেলিফোন ব্যবহারের সংখ্যা বাড়লেও কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখনো বেশ কম। তবে সফটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশের তরুণরা ভালো করছে। এ-সম্পর্কিত কিছু লেখাও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তবে উদ্ভাবনী সূচকে আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলো জিডিপির অনুপাতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে খুব কম বিনিয়োগ করছে। আবার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালন ব্যয়ের খুব কম অংশ গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে রাখছে। তাই জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি শক্তিশালী করতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি নিজস্ব উদ্ভাবনের প্রতি জোর দিতে হবে।

এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে শক্তিশালী হওয়ার মূল বাহন মানবসম্পদ। আর এ সম্পদ উন্নয়নে অধিক পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার। পাশাপাশি কারিগরি ও বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের দিকে জোর দেয়াও জরুরি। সেই সঙ্গে তথ্য অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সময় এসেছে এগুলো বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার।সুত্রঃ বণিকবার্তা