
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গত কয়েক বছরে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ফলে দেশের আর্থিক খাত সংকুচিত হয়েছে। একসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এখন অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে আর্থিক খাত সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলেও তা টাকা ছাপিয়ে নয়, স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে করতে হবে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ক্যাশলেস প্রচারণার অংশ হিসেবে কক্সবাজারে আয়োজিত এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
গভর্নর জানান, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার বেড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যার ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থ সরবরাহ বাড়াতে হলে রেমিট্যান্স, বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। চীন, ভারত ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জিডিপির অনুপাতে মুদ্রা সরবরাহ এখনও কম বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আগে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ধীরে ধীরে পরিকল্পিত উপায়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ না বাড়লে পুরো ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়, এতে আমানতও বাড়বে না।
ক্যাশলেস লেনদেন প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, নগদ লেনদেন কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচারণা চালাচ্ছে। সবার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছানো, ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে জোর দেওয়া এবং ফিনটেক খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তার মতে, আগামী ১০–১৫ বছরে প্রচলিত ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ডিজিটাল ব্যাংকে রূপ নেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে কক্সবাজারের সায়মন বিচ রিসোর্টে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের পরিচালক রাফেজা আক্তার কান্তা ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. পারওয়েজ আনজাম মুনির।
অনুষ্ঠানে এসএসএল কমার্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে ক্যাশলেস অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। পর্যটন এলাকায় ডিজিটাল লেনদেনের ব্যাপক সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে কক্সবাজারে দুই দিনব্যাপী ক্যাশলেস প্রচারণা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে লিড পার্টনার ছিল এসএসএল কমার্জ। এর আগে বিভিন্ন স্থানে র্যালি ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।







































