সোমবার । ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:৪৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

সুদানে নিহত সেনাসদস্য মাসুদ রানার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম


masud

সংগৃহীত ছবি

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মো. মাসুদ রানার বাড়িতে এখন শুধু কান্না আর হাহাকার। নাটোরের লালপুর উপজেলার দুর্গম বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে ঢুকলেই ভারী হয়ে আসে চারপাশের বাতাস—স্বজন, প্রতিবেশী আর গ্রামবাসীর চোখে-মুখে গভীর শোক।

স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি। কিছু বলার শক্তি নেই তার। পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাদের একমাত্র সন্তান, আট বছরের মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনা—বাবার ফেরার অপেক্ষায় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে ছোট্ট মেয়েটি। আর বারবার ছেলের নাম ধরে আহাজারি করছেন মা মর্জিনা বেগম—‘ব্যাটা, ব্যাটা’ বলে চিৎকারে ভেঙে পড়ছে প্রতিটি মুহূর্ত।

প্রায় ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন কর্পোরাল মাসুদ রানা। মাত্র এক মাস সাত দিন আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান তিনি। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে সুদানের আবেই এলাকায় ইউএন ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলায় তিনি নিহত হন। সেই হামলায় আরও পাঁচজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারান এবং আহত হন বেশ কয়েকজন।

শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহতের খবর পৌঁছায় পরিবারের কাছে। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে পরিবারটি। প্রতিবেশীরাও শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সান্ত্বনার ভাষা যেন সবারই ফুরিয়ে এসেছে।

নিহত কর্পোরাল (এমটি) মো. মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। ১৯৮৭ সালের ১৬ জুন জন্ম নেওয়া মাসুদ ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের একজন। পরিবারের তিন ছেলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য—যা পরিবার ও গ্রামের জন্য ছিল গর্বের বিষয়।

২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মাসুদ রানা। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন এবং একাধিকবার জাতিসংঘ মিশনে অংশ নেন। আগামী ২০৩১ সালে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দেশ ও মানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করে ফিরলেন শহীদের মর্যাদায়।

সেনা সদর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার পতাকা বহন করতে গিয়ে কর্পোরাল মাসুদ রানা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহস, ত্যাগ ও আত্মনিবেদনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নাটোর-১ (লালপুর–বাগাতিপাড়া) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।