ঈদে বাড়ি ফেরাটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অলিখিত যুদ্ধেরই নামান্তর। ঘরমুখো লাখো মানুষের ভিড় ঠেলে, পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনওক্রমে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে ঠাই করে বাড়ির পথ ধরেন কর্মজীবীরা। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করার আনন্দভাবনায় হয়তো এসব কষ্টের অনেকটাই আর কষ্ট থাকে না। কিন্তু মানুষের এই দুর্ভোগটুকু পুঁজি করে যখন একদল ব্যবসায় নেমে পড়ে তখন সেটা মেনে নেয়াটা কঠিন বৈকি! হ্যা ঈদকে সামনে রেখে গণপরিবহণগুলোয় অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বৃদ্ধির কথাই বলা হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতি নামের একটি সংগঠন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশকালে জানানো হয় ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথের যাত্রীদের কাছে থেকে ১০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর আদায় করা অতিরিক্ত অর্থের একটি বিশাল অংশ যাচ্ছে রাজনীতি ও প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে।
কেবল সড়ক পথেই চলতি বছর অন্তত ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া পরিবহন ভেদে ৮০০ থেকে ১৫০০, ১০০০ থেকে ১৬০০, ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারা দেশে যানজট ও সড়কের বেহাল দশার কারণে যাত্রীরা নৌপথের উপর এবার বেশী নির্ভরশীল। নৌপথে এবার ঈদে এক কোটিরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করবে। কিন্তু তার মধ্যে ৮০ শতাংশ যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া গুনে বাড়ি ফিরছে। এছাড়া রেলপথে প্রতিদিন ৭৬টি আন্তঃনগর, ৬২ টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন, ৯৫টি লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ যাত্রী বহন করা হয়। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ যাত্রী কালোবাজারির কাছ থেকে চড়া দামে টিকিট সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে রাস্তা সংস্কারে কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করা হয় অন্তত ছয় মাস আগে থেকে মেরামত শুরু করলে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব হবে। সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি শরিফ রফিকুজ্জামান, মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রুমি ও নির্বাহী সদস্য কাজী আমিনুল্লাহ মাহফুজ৷