Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সংকটে জনশক্তি বাজার

EXPATবাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির মূলস্থল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নানামুখী সংকটে বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। ইরাক, লিবিয়ার মতো একাধিক দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে আছে বাজার। আবার ভিসা সমস্যার কারণে প্রায় বন্ধ আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সংকটের কারণে নানা সমস্যায় পড়ছেন সেখানে থাকা প্রবাসীরা। সৌদি আরবে রপ্তানির হারও আশঙ্কাজনক কম। সমস্যা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে অপর্যাপ্ত মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়ার পরও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা সম্ভব হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে শুরু হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের নতুন উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্য মিশন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২৭ অক্টোবর আরব আমিরাত সফর করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ধাপে ধাপে সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইনসহ অন্য সব দেশেই যাবেন প্রধানমন্ত্রী। জনশক্তি রপ্তানির সমস্যা কাটানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সময়ের প্রতিশ্রুত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের বিষয়গুলো নিয়েও দেশগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার (প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ) মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে ২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান ভিসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভিসা। শ্রমিক, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসার পর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ট্রানজিট ভিসাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রানজিট ভিসায় গিয়ে আমিরাতে অবস্থান করা বন্ধ করতেই এই কঠোরতা। নারী শ্রমিকদের ভিসার পাশাপাশি শুধু ঢাকার আমিরাত দূতাবাসের সম্মতিতে স্বল্প পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে ট্রানজিট ভিসা। অবশ্য গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিএনপি সরকারের সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জটিলতার কারণে দুবাইয়ের ট্রানজিট ভিসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

chardike-ad

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, আমিরাতের ভিসা বন্ধ করা হয়নি, কিছু ক্ষেত্রে স্থগিত করা হয়েছে, তবে নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে পুরো মাত্রায় চলছে। জনশক্তি রপ্তানিকারক ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ এর ভোটদানের ক্ষেত্রে সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দুর্বলতার কারণে এটা হয়েছে। কূটনীতিকরা বলছেন, মূল কারণ  খুন, চুরি-ডাকাতি, চোরাচালান, মারামারি, জুয়া, মানব পাচার, যৌন ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধে ব্যাপকহারে বাংলাদেশিদের জড়িয়ে পড়া। তবে আমিরাত প্রস্তাবিত নিরাপত্তাবিষয়ক চুক্তির মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে বলে আশা করছেন তারা। অবশ্য শুধু আরব আমিরাত নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশেই নতুন শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুয়েতের বাজার সাত বছর ধরে বন্ধ আছে। ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কাতারের বাজারে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিকরা। সৌদি আরবসহ কয়েক দেশেও সীমিত হয়েছে নতুনদের যাওয়া। যে দেশগুলোতে যাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে নেই কাজের সুযোগ। আর মধ্যপ্রাচ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে অবস্থান করাদের একটি বড় অংশও নানা সমস্যায় পড়ছে। নতুন ভিসা বন্ধ থাকায় তারা আগের কাজ ছেড়ে নতুন কাজে যোগ দিতে পারছেন না। আবার কারও আগের কাজ শেষ হলে নতুন ভালো কাজের অফার থাকলেও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না, ফিরে আসতে হচ্ছে দেশে।

প্রবাসে অবস্থান করা ভুক্তভোগী বাংলাদেশি ও জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মতে, সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য যে দূরদৃষ্টি প্রয়োজন সরকারের তা ছিল না। যে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ দরকার ছিল, তাও যথাসময়ে নেওয়া হয়নি। এ কারণেই বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে। গবেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাতময় রাজনীতির নানা বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় সরকার জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কাজ করতে পারেনি। ফলে সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এদিকে প্রায় এক বছর ভিসা বন্ধ থাকার পর সংকটের সমাধান হতে যাচ্ছে বলে আশা করছে আমিরাত প্রবাসীরা। তাদের সব আগ্রহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন আমিরাত সফরকে ঘিরে। এ সফরের দিকে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরাও। অন্যদিকে, পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রস্তুতি চলছে আমিরাতের সঙ্গে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরেরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসা পুনরায় চালু হলেও তা চলতে থাকাটা নির্ভর করবে প্রবাসীদের আচরণের ওপর। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা আবারও তীব্র হয়ে পড়লে আমিরাত ফের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিদিন।