Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সব মামলা থেকে মুক্ত লিমন

limonর‌্যাবের দায়ের করা সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা থেকেও অবশেষে অব্যাহতি পেলেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পা হারানো লিমন হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঝালকাঠির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হলে বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ লিমনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। ৫৯৪ ধারা অনুযায়ী লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পর সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারক না থাকায় এক বছরের বেশি সময় বিষয়টি ঝুলে ছিল। এর আগে গত বছরের ২৯ জুলাই র‌্যাবের করা অস্ত্র আইনের মামলা থেকেও লিমনকে অব্যাহতি দেন ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। দুই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার মাধ্যমে অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত হলেন লিমন।

chardike-ad

তবে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরও পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি লিমনের পরিবার। র‌্যাবের বিরুদ্ধে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগমের দায়ের করা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলায় তিনি লিমনের ‘পঙ্গুত্বের জন্য দায়ী’ ছয় র‌্যাব সদস্যের বিচার চেয়েছেন।
আদালতের আদেশের পর লিমন বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী র‌্যাব আমার জীবন থেকে কেবল কয়েকটি বছরই নয়, আমার বাঁ পা চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। আমি একজন কলেজছাত্র এ কথা বারবার বলার পরও তারা আমার পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়।’

বর্তমানে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিমন বলেন, ‘আমার মা ছয় র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় যেদিন দোষীদের বিচার হবে, সেদিনই আমি সন্তুষ্ট হতে পারব।’
হেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি যে মামলা হরছি, হেয়ার রোজ রোজ তারিখ পাল্ডায়। আমার নির্দোষ পোলারে যারা পঙ্গু হরছে, হ্যাগে বিচার না অওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি অইবে না।’
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত হন লিমন। সাতুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লিমন সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার এক পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন।

ওই ঘটনার পর লিমনকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা করে র‌্যাব। অন্যদিকে, ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ছয় র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো র‌্যাবের সমালোচনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও লিমনের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।

এ পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র‌্যাবের দায়ের করা মামলা দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। ওই আবেদন জমা পড়লে গত বছরের ২৯ জুলাই ঝালকাঠির ২ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কিরণ শংকর হালদার অস্ত্র আইনের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন, অব্যাহতি পান লিমন। তবে হাকিম আদালতে বিচারক না থাকায় সরকারি সিদ্ধান্তের পরও অন্য মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন ঝুলে থাকে ১৫ মাস। সম্প্রতি ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নতুন বিচারক যোগ দেওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন লিমন।
বরিশাল র‌্যাব-৮-এর তখনকার ডিএডি লুৎফর রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে লিমনের মায়ের করা মামলাটি ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। লিমনের আইনজীবী আক্কাস শিকদার বলেন, ‘ওই মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী এখন পর্যন্ত ১১ বার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ফলে বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর আবার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।’