Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কামারুজ্জামান যা বললেন…

kamruzzaman_pran

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমার ফাঁসির জন্য তরুণ সমাজ যে আন্দোলন করছে তা না বুঝে করছে। একদিন এমন সময় আসবে এই তরুণ সমাজই জেগে উঠবে। আর সেদিন ইসলামের বিজয় এই তরুণ সমাজ দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হবে।’

chardike-ad

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ শেষে কামারুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলগেটে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে জামায়াতের আইনজীবী প্যানেলের চার সদস্যের একটি দল কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে প্রবেশ করেন।

শিশির মনির আরো বলেন, ‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর রিভিউ ও প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কামারুজ্জামান। তিনি এখন সুস্থ আছেন, মনোবলের দিক দিয়ে শক্ত আছেন, তিনি ফাঁসি নিয়ে বিচলিত নন। সুস্থ ও স্বাভাবিক মস্তিস্কে তিনি আরো বলেছেন, রিভিউ আবেদনের সুযোগ পেলে তিনি খালাস পাবেন।’

জেলগেটে আরেক আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হতে ৭৮ দিন সময় লেগেছিল। এরপর রিভিউ করা হয়েছিল। আপিল বিভাগ রিভিউ গ্রহণ করেছিলেন এবং তা শুনেছিলেন। এরপর ডিসমিস করে দিয়েছেন। তারপর রিভিউয়ের শর্টকপি দিয়ে রায় কার্যকর করা হয়েছিল। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে এর সবই প্রযোজ্য হবে।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধীতা করে শিশির মনির বলেন, তিনি আইনের ভিত্তিতে কথা বলেননি। তার কাজ কর্ম দেখে মনে হয়েছে, তিনি অনেকটা তাড়াহুড়ো করছেন। রায়ের লিখিত কপি হাতে পাওয়ার পর কামারুজ্জামান রিভিউ ও প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ার পর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সাতদিন সময় পাবেন। কিন্তু এখনো না লিখিত, না ওয়ারেন্ট এর কোনোটিই প্রকাশ পায়নি। আইনমন্ত্রী কিভাবে ওয়ারেন্ট ইস্যু না হতেই কামারুজ্জামানকে সাত দিনের সময় দেন।

এ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যেরও বিরোধীতা করে শিশির মনির বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি যে, আমরা রিভিউ আবেদন করবো। অন্যদিকে আপিল বিভাগেও রায়ের কপি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তিনি কিভাবে আইনের বাইরে কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তো সংবিধানের অনুচ্ছেদের বদলে ধারায় কথা বলছেন। আসলে সংবিধানের কোনো ধারা নেই, আছে অনুচ্ছেদ। সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ কাদের মোল্লার ফাঁসির আগেও ছিলো এখনো আছে। সুতরাং অ্যাটর্নি জেনারেল ৪৭ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সঠিক নয়।

এর আগে কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন জেলগেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রায়ের পুর্ণাঙ্গ কপি অথবা শর্টকপি প্রকাশ এবং রিভিউ পিটিশনের সুযোগ দেওয়া না হলে ক্রিমিনাল ‘ল’ এর আওতায় তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। কারণ, একজন মানুষকে কোনো প্রকার আইনের অধিকার না দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিকার চেয়ে তিনি মামলা দায়ের করবেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। সকাল সোয়া ১০টায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। কামারুজ্জানের সঙ্গে যে চার আইনজীবী সাক্ষাৎ করেছেন তারা হলেন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট মশিউল আলম। কারাগারে তারা কামারুজ্জামানের সঙ্গে আইনী বিষয়ে আলোচনা করেন। বেলা সোয়া ১১টায় সাক্ষাৎ শেষে আইনজীবীরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

এরআগে বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের নয় সদস্য।

ওই দিন সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ বাড়িতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, জেলকোড ও আইন মেনে কারা কর্তৃপক্ষকে কামারুজ্জামানকে ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। যখন থেকে তিনি ফাঁসির আদেশের কথা জেনেছেন তখন থেকে ৭ দিনের মধ্যেই প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে রায় শোনার সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাইলে যেকোন সময় ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

এর আগে দুপুরে আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে জরুরি বৈঠক করেন তিনি।

গত বছরের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গত সোমবার আপিলের চূড়ান্ত রায়েও ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।