‘এখন আমার কেউ নেই। বাবা-মা কেউ নেই। আমি একা এবং অসহায়। এখন আমার বেঁচে থাকাটাই শাস্তি।’ কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলামের একমাত্র ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন।
এসময় শফিউল ইসলামের বৃদ্ধা মা সখিনা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। তবে সভার পুরো সময় তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। পুরো সময় তিনি সেখানে বসে কেঁদেছেন। তার কান্না দেখে সভায় উপস্থিত প্রায় সবার চোখই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।
শফিউল ইসলাম স্মরণে বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে এক শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় নিহত শিক্ষকের পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
শোকসভায় উপস্থিত বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেভিন বলেন, ‘জঙ্গী গোষ্ঠী আমার বাবাকে হত্যা করেছে। বাবার আদর্শের পথে চলার কারণে আমার জীবনও হুমকির মুখে। আমার বাবাকে আপনারা বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। আমার বাবা তার আদর্শ আপনাদের মাঝে দিয়ে গেছেন। সেই আদর্শকে হারিয়ে যেতে দেবেন না’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জেভিন বলেন, ‘বাবা ছিলেন আমার ভালো বন্ধু। তিনি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন। আমাকে বলতেন স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তিনি ১০০ বছর বেঁচে থাকতে চান। তার যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হতো তাহলে না হয় মেনে নিতাম। কিন্তু ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিল না। প্রাণির প্রতি সহিংসতা হয় বলে যে মানুষটা আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তাকে কেন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো?’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার হাস্যোজ্জ্বল মুখের ছবি শোকের ব্যানারে দেখব সেটা কখনও ভাবিনি। আজ এ শোক সভায় আমার বক্তব্য দেওয়ার অবস্থা নেই। আমার কোনো ভাষা নেই, আমার ভাষা শুধু চোখের পানি আর বুকের হাহাকার। আমার মাঝে আমার বাবার অস্তিত্ব রয়েছে, আর আপনাদের মাঝে উনি বেঁচে থাকবেন।’
শোকসভায় অধ্যাপক শফিউল ইসলামের বোন ওয়াসিম রুমানা লিপি বলেন, ‘আমরা সংবাদের শিরোনাম হতে চাই না। হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বারবার হত্যাকাণ্ডে শিকার হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। আর যাতে এ রকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে সে জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে সর্বোচ্চ আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা সুলতানার সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন শফিউল ইসলামের সহকর্মী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ারদাতুল আকমাম, নিলুফার সুলতানা, ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী, ড. সিদ্দিকুর রহমান, জুলফিকার আলী ইসলাম, সুলতানা মোস্তফা খানম প্রমুখ।
তথ্য সূত্রঃ অর্থসূচক