Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভিখারি থেকে হিরো!

aamir-pk-beggar

রাস্তায় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে অন্ধ ভিখারি। নাচতে নাচতে এসে তার ভিক্ষার বাটি থেকে পয়সা তুলে পালালেন বলিউডের আমির খান! বাস্তব নয়। এটি আমিরের ‘পিকে’ ছবির ৫ সেকেন্ডের দৃশ্য। এটুকুতেই জীবন বদলেছে আসামের মনোজ রায়ের। হয়েছেন ভিখারি থেকে হিরো!

chardike-ad

ভারতের এক বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষা করে দিন কাটানো ওই তরুণের ভাগ্যে জুটেছে যশ। তার নামে খোলা হয়েছে ‘ফেসবুক’ অ্যাকাউন্ট। এসেছে প্রেমও! কারণ, ছবির পর্দার ওই ভিখারি যে মনোজই।

তেজপুর জাহাজঘাটে জন্ম মনোজের। বয়স যখন ৪ দিন, তখন তার মা মারা যান। বাবা মুটের কাজ করতেন। তিনিও অসুস্থ। পঞ্চম শ্রেণিতেই তাই স্কুল ছেড়ে চাকরির খোঁজ শুরু করেন মনোজ। কিছু না পেয়ে দিল্লি পাড়ি দেন। মূক-বধির-অন্ধ সেজে যন্তরমন্তরের সামনে ভিক্ষার বাটি নিয়ে বসেন।

এক দিন সব কিছু বদলে যায়। সে দিন বিকেলে দু’জন মনোজের কাছে আসেন। তিনি অভিনয় করতে পারেন কি না, তা জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে তিনি বলেন, অভিনয় করেই ভাত জোগাড় করছি। এরপরই ওরা তাকে একটা মোবাইল নম্বর আর কুড়ি টাকা দেয়। পর দিন ওই নম্বরে ফোন করেন তিনি।

তারপরই ঢাউস গাড়ি নিয়ে যন্তরমন্তরের সামনে হাজির হয় সিনেমা ইউনিটের লোকজন। নেহরু স্টেডিয়ামে ‘অডিশন’ দিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পর পর কয়েক দিন ওই স্টেডিয়ামেই যেতেন তিনি। মনোজের কথায়, কী সিনেমা, কে অভিনয় করছেন, পরিচালক রাজকুমার হিরানিই বা কে, কিছুই জানতাম না। বিনা পয়সায় ভাল খাবারের লোভেই ওখানে যেতাম।

একদিন খাওয়া দাওয়ার পর একটা অল্পবয়সী ছেলের কাছে সিগারেট চাইলে গেলে সেদিনই জানতে পারেন আমিরই ছবির নায়ক। ৭-৮ জন ভিখারীকে বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত মনোজকেই বেছে নেন পরিচালক। তারপরের গল্প একেবারেই যেন রূপকথা।

ওই তরুণের কথায়, আমাকে একটা পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হল। তেজপুরে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার শিখেছি। দিল্লিতে স্নানের জায়গাই জুটত না। হোটেলের ঘরে বাথটাব, সুইমিং পুলে আরামে ডুব দিতাম!

ঘোর এখনও কাটেনি মনোজের। তিনি বলে চললেন, আমির খান, সুশান্ত সিংহ রাজপুত, আনুষ্কা শর্মার সঙ্গে সামনা সামনি আলাপ হল। সুশান্ত নিজে এসে কথা বললেন। আনুষ্কাও। আমিরকে বললাম, আমি তার খুব বড় ফ্যান। সব যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল।

‘পিকে’র শুটিং শেষ হয়। শেষ হয় মনোজের রূপকথার দিনগুলোও। পারিশ্রমিক হাতে পেয়েই মুম্বাইয়ের ট্রেনে চেপে বসেন মনোজ। ‘মায়ানগরী’ ঘুরতে গিয়ে নিমেষে পকেট ফাঁকা। তিনি ফেরেন গুয়াহাটিতে। আমিরের সঙ্গে এক ছবিতে কাজ করার পর কি আর ভিক্ষার বাটি নিয়ে রাস্তায় বসা যায়? সে কথা ভেবে শোণিতপুরের বেদেতিতে একটি দোকানে কাজ নেন মনোজ।

‘পিকে’র বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখানোর পর রাতারাতি ‘হিরো’ হয়ে যান তিনি। সবাই এখন তাকে ‘হানি সিংহ’ বদলে ডাকে ‘পিকে হানি সিংহে’। এখন এক ডাকে তাকে চেনেন বেদেতির বাসিন্দারা।

সলজ্জ মনোজ জানান, বড়দিনে প্রথমবার প্রেমিকার মুখোমুখি হবেন তিনি। সবই আমিরের দয়ায়। তার আশা, ‘পিকে’ মুক্তি পাওয়ার পর অসমীয়, বাংলা ছবির পরিচালকরাও তাকে কাজ করতে ডাকবেন। ফের তিনি ফিরবেন রূপকথার জীবনেই।