শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক ফিচার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩:০৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিশ্বের ১০ মসজিদের দেশ


Mosque cover

মসজিদ মুসলমানদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু নামাজ বা ইবাদতের স্থান নয়—বরং সামাজিক, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রও বটে। মসজিদ কেবল একটি স্থাপনা নয়, বরং বহু মুসলিম দেশে সমাজজীবন, মিলনমেলা ও জনসেবার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে।

কোনো দেশে মসজিদের বিস্তার সাধারণত সেই দেশের মুসলিম জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।

চলুন এবার দেখে নিই বিশ্বের সর্বাধিক মসজিদ থাকা শীর্ষ ১০ দেশকে, যা বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।

Indonesia Mosque

ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক মসজিদ—৭,৪৪,০০০ (৭ লক্ষ ৪৪ হাজার) নিবন্ধিত মসজিদ (জুলাই ২০২৫ অনুযায়ী)। এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মসজিদ তথ্য পোর্টাল সিমাস (Simas)।

বড় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম—প্রায় সর্বত্রই মসজিদ রয়েছে দেশটিতে। অনেক সময় একই রাস্তায় একাধিক মসজিদ দেখা যায়।

ইস্তিকলাল মসজিদ ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও প্রতীকী মসজিদ। জাকার্তায় অবস্থিত এই মসজিদ স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই মসজিদে রয়েছে বিশাল গম্বুজ ও সুউচ্চ মিনার।

India Mosque
ভারত
ভারতে ২০ কোটিরও বেশি মুসলমান বসবাস করে। যদিও এটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ নয়, তবুও মসজিদের সংখ্যায় এটি দ্বিতীয় অবস্থানে—প্রায় ৩,০০,০০০ (৩ লক্ষ) মসজিদ রয়েছে।

ভারতের মসজিদগুলোতে ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে শুরু করে মহল্লাভিত্তিক ছোট ছোট নামাজঘরও অন্তর্ভুক্ত।

অনেক ভারতীয় মসজিদ লাল বেলেপাথর বা সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি, যেখানে সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম চোখে পড়ে। স্থাপত্যে পারস্য, তুর্কি ও ভারতীয় ধাঁচের মিশ্রণ দেখা যায়। গম্বুজ, খিলান, জ্যামিতিক নকশা, ফুলেল অলঙ্করণ ও স্তম্ভশোভায় হিন্দু ও ইসলামি শিল্পকলার প্রভাব প্রতিফলিত হয়।

Bangladesh Mosque

বাংলাদেশ
পোয়িডাটা.আইও (Poidata.io)–এর জুন ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সক্রিয় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ১,৫২,২৪১ (এক লক্ষ ৫২ হাজার ২৪১)।

বাংলাদেশে মসজিদের এত বেশি সংখ্যার কারণ হলো—মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা, স্থানীয় কমিউনিটির উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণের ঐতিহ্য, এবং সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ নেটওয়ার্ক বিস্তারের বহুমুখী প্রচেষ্টা।

বাংলাদেশের মসজিদ স্থাপত্যে যেমন বাংলা সুলতানি ঐতিহ্যের ছাপ রয়েছে, তেমনি আধুনিক স্থাপত্যে ইসলামি নান্দনিকতার প্রকাশও দেখা যায়।

দেশের অনেক মসজিদ মাদ্রাসা বা ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

 

Egypt Mosque

মিশর
মিশরের সেন্ট্রাল এজেন্সি ফর পাবলিক মোবিলাইজেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (CAPMAS)–এর ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১,৫১,১৯৪ (এক লক্ষ ৫১ হাজার ১৯৪) সক্রিয় মসজিদ রয়েছে।

মিশরের মসজিদগুলো শুধু নামাজের জায়গা নয়, দাওয়াত, শিক্ষা ও সামাজিক সেবার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। সরকার এই মসজিদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ধর্মীয় শিক্ষা ও সমাজসেবা বিস্তার করে থাকে।

কায়রোর ঐতিহাসিক মসজিদ থেকে শুরু করে আধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পর্যন্ত—সব মিলিয়ে মিশরীয় সমাজে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফুটে ওঠে।

বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় আজও বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইসলামি বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিবেচিত।

Pakistan Mosque
পাকিস্তান
ইউএই মোমেন্টস (Uae Moments)–এর তথ্যমতে, পাকিস্তানে প্রায় ১,০০,০০০ থেকে ১,১০,০০০ মসজিদ রয়েছে। দেশটির বড় শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্র মসজিদ বিস্তৃত।

ইসলামাবাদের ফয়সাল মসজিদ শুধু পাকিস্তানের নয়, বরং গোটা বিশ্বের অন্যতম আইকনিক স্থাপনা। পাকিস্তানের মসজিদ স্থাপত্যে ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ নিদর্শন পাওয়া যায়।

এসব মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং শিক্ষা, সমাজ উন্নয়ন ও ইসলামি পরিচয়ের প্রতীক হিসেবেও কাজ করে।

Sudan Mosque

সুদান
সুদানে সক্রিয় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৭৮,১০০। এর বেশিরভাগ রাজধানী খার্তুম, ওমদুরমানসহ বড় শহর ও গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত। প্রায় ৯০% জনগণ মুসলমান হওয়ায় মসজিদ এখানে সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সুদানের মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং আধ্যাত্মিকতা, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকলার কেন্দ্র। এসব মসজিদ ইসলাম ও স্থানীয় সংস্কৃতির এক অনন্য মেলবন্ধনকে প্রতিফলিত করে।

ইরান
যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক জাতীয় তথ্য নেই, তবে ইরান ওপেন ডাটা –এর মতে, ইরানে ৫৫,০০০ থেকে ৭৫,০০০ মসজিদ রয়েছে। এ কারণেই দেশটি বিশ্বের সর্বাধিক মসজিদ থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ইসলামি বিপ্লবের পর সরকার ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তার ও আদর্শগত বৈধতা জোরদার করতে ব্যাপকভাবে মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। এর ফলে মসজিদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যদিও বর্তমানে সব মসজিদ সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয় না।

আকর্ষণীয় বিষয় হলো—ইরানের প্রায় ৩৪টি মসজিদ (যেমন ইসফাহানের জামে মসজিদ ও শাহ লতফুল্লাহ মসজিদ) ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পেয়েছে। এসব মসজিদ সাফাভিদ ও কাজার আমলের সমৃদ্ধ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন।

Turkey Mosque

তুরস্ক
পোয়িডাটা.আইও (Poidata.io)–এর জুলাই ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কে সক্রিয় মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৪১,৮৮৩। ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও কোনিয়া সহ সব প্রদেশেই এগুলো বিস্তৃত।

তুরস্কের মসজিদ স্থাপত্যে ১৬শ শতকের ঐতিহ্য থেকে শুরু করে আধুনিক বহুমুখী কমপ্লেক্স পর্যন্ত বৈচিত্র্য দেখা যায়। এখানে আধ্যাত্মিকতা, জাঁকজমক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অনন্য সমন্বয় ফুটে ওঠে।

সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ইস্তাম্বুলের আয়াসোফিয়া, যার বাইজেন্টাইন ও ইসলামি স্থাপত্যের মিশ্রণ, বিশাল গম্বুজ ও চমৎকার দেয়াল অলঙ্করণ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।

Morocco Mosque
মরক্কো
পোয়িডাটা.আইও–এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত মরক্কোতে প্রায় ২০,২২৮ সক্রিয় মসজিদ রয়েছে। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী সংখ্যা আরও বেশি—প্রায় ৫১,০০০ থেকে ৫২,০০০। এর মধ্যে প্রায় ৭২% মসজিদ গ্রামীণ এলাকায়।

মরক্কোর মসজিদ স্থাপত্যে মুরিশ, আলমোহাদ ও মারিনিদ শৈলী স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এছাড়া আধুনিক সংযোজন হিসেবে “গ্রিন মসজিদ”–এর মতো স্থাপত্যও রয়েছে।

এসব মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থান নয়, বরং মরক্কোর ইসলামি পরিচয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীকও।

Nigeria Mosque
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়ায় হাজার হাজার মসজিদ রয়েছে, যা দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম বেশি মসজিদসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, শুধু ওসুন অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৩৮০টি মসজিদ রয়েছে, যেখানে জনসংখ্যা ২৩ লাখ।

দেশটির কানো, কওয়ারা, ইয়োব, বোর্নো ও লাগোসের মতো মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে মসজিদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।

নাইজেরিয়ার মসজিদগুলোতে রয়েছে আবুজার ন্যাশনাল মসজিদ–এর মতো প্রতীকী স্থাপনা থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকার ছোট ছোট মসজিদ। এগুলো পশ্চিম আফ্রিকার সমৃদ্ধ ইসলামি স্থাপত্য ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।

শেষকথা
সবচেয়ে বেশি মসজিদ থাকার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে শীর্ষে। এটি দেশটির ইসলামি পরিচয় ও কমিউনিটি স্পিরিটকে প্রতিফলিত করে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোও বৈশ্বিক মুসলিম জনসংখ্যার বৈচিত্র্য তুলে ধরে।

ভ্রমণ বা জ্ঞানার্জনের দিক থেকে জানা গুরুত্বপূর্ণ—কোথায় মসজিদ বেশি রয়েছে, তা বোঝা গেলে ইসলাম কীভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে গড়ে তোলে, তার একটি চিত্র পাওয়া যায়।

বিশ্ব যুবসমাজ যখন আন্তঃসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতায় (যেমন ইউথ ব্রেক দ্য বাউন্ডারিজ আয়োজিত মিডল ইস্ট ইয়ুথ সামিট) আরও বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছে, তখন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।