
শিশু সাজিদকে বাঁচানো গেলো না। প্রায় ৩২ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে জীবিত উদ্ধারের কথা বলা হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস শিশুটিকে উদ্ধারের পর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে শিশু সাজিদকে মৃত ঘোষণা করেন তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাক।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে কোয়েলহাট গ্রামের মাঠের পাশে হাঁটার সময় অসাবধানতাবশত নলকূপের ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, কোয়েলহাট গ্রামের মাঠের পাশ দিয়ে মায়ের সঙ্গে হাঁটার সময় অসাবধানবশত পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। মায়ের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে প্রথমে উদ্ধার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনটি ইউনিট এসে তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
প্রথমে চার্জ ভিশন ক্যামেরা দিয়ে প্রায় ৩৫ ফুট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালানো হলেও শিশুটিকে শনাক্ত করা যায়নি। পরে এস্কেভেটর দিয়ে গভীর বড় একটি গর্ত খনন করা হয় এবং সেখান থেকে সুড়ঙ্গ করে পৌঁছানোর চেষ্টা চালানো হয়, কিন্তু সাফল্য মেলেনি। এরপর আবারও ক্যামেরা নামানো হলে শুধু মাটির স্তর দেখা যায়। এরপর ফায়ার সার্ভিস নতুনভাবে খনন কাজ শুরু করে এবং ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
দুর্ঘটনার পরপর শিশুটির সাড়াশব্দ পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আওয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়; যা উদ্ধারকর্মীদের শঙ্কিত করে তোলে। তবে গর্তের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখে ফায়ার সার্ভিস। মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছরখানেক আগে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ওই নলকূপ খোঁড়া হয়েছিল। পানি না ওঠায় মালিক সেটি মাটি দিয়ে ঢেকে রাখেন। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে পড়ে নলকূপের মুখ আবারও উন্মুক্ত হয়ে যায়। সেই গর্তেই দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় শিশু সাজিদ।
শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, বুধবার দুপুরে ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটার সময় মেজো ছেলে সাজিদের হাত ধরে ছিলেন। হঠাৎ ‘মা’ বলে ডাক শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখেন, সাজিদ নেই—নলকূপের গর্তের ভেতর থেকে তার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
এর আগে সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে জীবিত বা মৃত যে অবস্থায়ই হোক, শিশুটিকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।




































