
বাংলাদেশের মাল্টা উৎপাদনে একক জেলা হিসেবে খাগড়াছড়ি বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাল্টা উৎপাদনে একক জেলা হিসেবে খাগড়াছড়ি বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছে। যদিও ঐতিহাসিকভাবে দেশের পার্বত্য তিন জেলা– খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি সম্মিলিতভাবে মাল্টার সবচেয়ে বড় ফলনভূমি হিসেবে পরিচিত। এই তিন জেলায় মোট ১৩ হাজার ৪৩ টন অর্থাৎ ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৩ হাজার কেজির মতো মাল্টা উৎপাদিত হয়।
২০২৪ সালের ফল উৎপাদনের হিসাবে, খাগড়াছড়ি জেলায় ১ হাজার ৫৬০ একর জমিতে মোট ৫ হাজার ৮৩৯ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে, যা এককভাবে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর পরেই রয়েছে বান্দরবান জেলা, যেখানে ১ হাজার ১৯৭ একর জমিতে ফলন হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৬ টন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাঙামাটিতে ৬৬২ একর জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৫১৮ টন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি কৃষি সহায়তা ও উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণের ফলেই মাল্টা চাষে এই বিপ্লব এসেছে। পার্বত্য অঞ্চলে মূলত বারি মাল্টা-১ এবং স্থানীয়ভাবে পরিচিত দার্জিলিং অরেঞ্জ জাতের চাষ বেশি হচ্ছে। বারি মাল্টা-১ জাতটি ফলনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং এর মিষ্টতা বাজারে বেশ সমাদৃত। এর পাশাপাশি, কৃষকদের মধ্যে সঠিক পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিও ফলন বাড়াতে সহায়তা করেছে।

পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের সমতল ভূমিতেও মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো পিরোজপুর, যেটিকে এখন ‘মাল্টার জেলা’ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। চলতি বছরে এই জেলায় ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এই জেলাগুলোতে বিশেষত পিরোজপুর ও মাগুরায় দেশীয় আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই বাউ মাল্টা-৩ (BAU Malta-3) জাতটির চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাল্টা উৎপাদনে মাগুরা জেলা ছিল শীর্ষে, যেখানে সেই বছর ১ হাজার ৫৪৩ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছিল। বর্তমানে সমতলের বরিশাল অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাল্টা উৎপাদিত হয়। রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর, দিনাজপুর এবং সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলাতেও এখন মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, দেশীয় মাল্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। সামগ্রিক উৎপাদনের পরিমাণে, পার্বত্য জেলাগুলো সম্মিলিতভাবে এখনও দেশের প্রধান মাল্টা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে তাদের স্থান ধরে রেখেছে।




































