Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে দুদকের ‘নাটক’

dudok

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গত মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বর্তমান ৬ এমপির সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে আলোচনা আসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে এ তালিকায় আরও ৫ জন সাবেক ও বর্তমান এমপিকে যোগ করে কমিশন। আর নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে তাদের সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে সংস্থাটির প্রথম দিককার এই তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও কয়েকজনকে অব্যাহতি দিয়ে বছর শেষে সেই ‘নখ-দন্তহীন বাঘের খেতাব’ ধরে রেখেছে দুদক।

chardike-ad

দুদক সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বিররণীতে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির সম্পদে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায়। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর হলফনামা খতিয়ে দেখা ও অবৈধ সম্পদ খুজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ লক্ষ্যে ২২ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে সাবেক এক মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রীসহ ৬ জন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তাদের ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও ৩ জনকে দায়মুক্তি দেয় কমিশন। অবশ্য বিএনপি-জামায়াতের সাবেক ২ সাংসদ, মহাজোটের সাবেক মন্ত্রী শামসুল হক টুকু, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও সাবেক সাংসদ ডা. এইচ বি এম ইকবালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যহত রেখেছে  দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

বছরের শুরুতেই দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয় সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পামন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, রাজশাহীর এনামুল হক, কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদি, ঢাকার আসলামুল হক ও সাতক্ষীরার আব্দুল জব্বার এমপির বিরুদ্ধে। ছয় মাসের অধিক সময় অনুসন্ধানে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এসব প্রভাবশালীকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

অনুসন্ধান শেষে প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের মোট ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৫১২ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। যাতে মামলা হয় রাজধানীর রমনা থানায়। একই থানায় ১২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর সম্পদের তথ্য গোপনসহ মোট ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয় সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে। তবে তাদের কাউকেই গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়নি দুদক।

অন্যদিকে একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত সংসদ সদস্য আসলামুল হক, এনামুল হক, আব্দুল জব্বার ও  সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রুহুল হককে দায়মুক্তি দেয় দুদক। এর মধ্যে রুহুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পাঁচ বছরে তার ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১০ গুণ। তার স্ত্রী ইলা হক হন তার চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা।

ঢাকার আলোচিত এমপি আসলামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৫ বছরে তার ও তার স্ত্রীর নামে জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তার সম্পদের ব্যবধান ৮ গুণ।

জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছিল দুদক। তবে অনুসন্ধানে তা প্রমাণ করতে পারেনি তারা।

তবে রাজশাহীর সংসদ সদস্য সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ২১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী তহুরা হকের বিরুদ্ধে ৪৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রমাণ পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। আর এই প্রমাণের ভিত্তিতে মামলার সুপারিশ করায় পিএসকে দিয়ে ফোন করিয়ে তাকে ‘হাওয়া করে দেওয়ার’’ হুমকিও দেন রাজশাহী-৪ আসনের (বাগমারা) এমপি এনামুল। শেষ পর্যন্ত মামলার সুপারিশকারী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি, পুনরায় অনুসন্ধানসহ নানা কৌশলে দায়মুক্তিই দেওয়া হয় তাকে।

এপ্রিল মাসে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও জামায়াত নেতা গোলাম পারওয়ারের বিরুদ্ধে। ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৪০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ১ কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৬৭০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয় এ্যানীর বিরুদ্ধে। গোলাম পারওয়ার জেলে থাকায় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বন্ধ রয়েছে।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুসন্ধান শুরু হয় জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাজোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে। তবে শুরু হওয়ার পরই অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় এ দুই প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান। আর বছরের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. ইকবালের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

সাবেক মন্ত্রীসহ বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও অনুসন্ধান বন্ধ করে দেওয়াকে কমিশনের ‘নাটক’ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এসব মন্ত্রী এমপির অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অনুসন্ধানে নামে দুদক। তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বছর শেষে দুদক তার সেই ‘নখ-দন্তহীন বাঘের খেতাব’ ধরে রেখেছে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক আসলে ক্ষমতার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুম্পষ্ট প্রমাণ দুদক আজও দেখাতে পারেনি।

সূত্রঃ অর্থসুচক