Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

লজিস্টিক সেবায় দ্রুত উন্নতির তালিকায় বাংলাদেশ

ctg portআন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য আনা-নেয়ার (লজিস্টিক) সেবা প্রদানে উদীয়মান (ইমার্জিং) অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করছে। এজন্য সেরা ১০ উন্নতির (মুভার্স আপ) তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যদিও এ খাতে উন্নতির আরো অনেক সুযোগ আছে। ‘এজিলিটি ইমার্জিং মার্কেটস লজিস্টিকস ইনডেক্স ২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

সূচকে ৪৫টি দেশের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮তম। এছাড়া পয়েন্ট ১০-এর মধ্যে ৪ দশমিক ৫৬। গত বছরের তুলনায় এ সেবায় তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

chardike-ad

প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রণয়ন করেছে যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ইন্টেলিজেন্স (টিআই) ও অস্ট্রেলিয়ার এজিলিটি। উল্লেখ্য, এজিলিটি বিশ্বের খ্যাতনামা লজিস্টিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম। আর ট্রান্সপোর্ট ইন্টেলিজেন্স লজিস্টিক বিষয়ে খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। গত সোমবার মধ্যরাতে ‘ইমার্জিং মার্কেটস লজিস্টিকস ইনডেক্স ২০১৫’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। উদীয়মান ৪৫টি দেশের ওপর সূচকটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উদীয়মান দেশগুলোর লজিস্টিক সেবা, উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন, শিপিং লাইন এবং ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, লজিস্টিক সেবায় দ্রুত উন্নতি করছে এমন তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে পাকিস্তান। যদিও সার্বিকভাবে দেশটির অবস্থান ২৫। সেরাদের (মুভার্স আপ) তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলাম্বিয়া, তৃতীয় আলজেরিয়া, চতুর্থ বাংলাদেশ ও পঞ্চম ফিলিপাইন। এর পর যথাক্রমে রয়েছে— তানজানিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনাম।

ব্যবসায়ীদের মতে, লজিস্টিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বাস্তবসম্মত। বিদ্যমান অবকাঠামো সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ফলেই এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। অবকাঠামো সুবিধার আরো উন্নয়ন ঘটলে সূচকে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে দেশের বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত নাও থাকতে পারে বলে তারা আশঙ্কা তাদের।

রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মূর্শেদী এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান ভৌত ও অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন। বন্দরের দক্ষতা হয়তো বাড়েনি, কিন্তু যথাযথ ব্যবহার হয়েছে। সব মিলিয়েই লজিস্টিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৪ সালে পুরো বছর ব্যবসা-বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে। সূচকে এগিয়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ। তবে আরো অনেক ভালো করা সম্ভব ছিল। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

এদিকে অবনমনের (মুভার্স ডাউন) দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে লিবিয়া। এর পর রয়েছে— জর্ডান, মিসর, কম্বোডিয়া ও কুয়েত। এ তালিকায় ছয় থেকে ১০-এ যথাক্রমে রয়েছে— ইউক্রেন, বাহরাইন, কাজাখস্থান, লেবানন ও আর্জেন্টিনা।

উল্লেখ্য, লজিস্টিক সেবা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমন একটি অপরিহার্য সেবা, যা আমদানি-রফতানির জন্য কোনো দেশের ভেতর পণ্য পরিবহন, গুদামজাতকরণ, পণ্য জাহাজীকরণ, মোড়কীকরণ, নিরাপত্তা, বর্ডার ক্লিয়ারেন্স এবং পেমেন্ট ব্যবস্থার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এ সেবা সরকারি ও বেসরকারি এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে লজিস্টিক নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। যে দেশের লজিস্টিক সেবার মান যত ভালো, সেই দেশে ব্যবসার খরচ তত কম। সে দেশের অর্থনীতিও তত দ্রুত উন্নতি করছে।

প্রতিবেদনে জিডিপির আকারের ভিত্তিতে দেশগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি জিডিপির দেশগুলোকে বৃহত্ উদীয়মান দেশ ও ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কম জিডিপির দেশকে ছোট উদীয়মান দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জিডিপির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে ১৬টি দেশকে বৃহত্ উদীয়মান ও ২৯টিকে ছোট উদীয়মান দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ছোট উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩। আর দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, লজিস্টিক সেবায় সার্বিকভাবে শীর্ষে আছে চীন, যার পয়েন্ট ৮ দশমিক শূন্য ৯। দ্বিতীয় অবস্থানে সৌদি আরব, পয়েন্ট ৬ দশমিক ৭৬। ৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ব্রাজিল, ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ ইন্দোনেশিয়া ও ৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারত। শীর্ষ ১০-এ ষষ্ঠ থেকে ১০ম অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে— সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো ও তুরস্ক।

পূর্ণাঙ্গ সূচকটি তিনটি উপসূচকের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে। উপসূচকগুলো হলো— লজিস্টিক সেবার বাজারের আকার ও প্রবৃদ্ধি, লজিস্টিক সেবার বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং লজিস্টিক সেবার বাজারে যোগাযোগ সক্ষমতা। এ তিন উপসূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৮-এর মধ্যে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬২, ৪ দশমিক ৪৪ ও ৩ দশমিক ৫৯। তবে যোগাযোগ সক্ষমতায় বাংলাদেশের উন্নতির বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফএ) পরিচালক (জনসংযোগ) খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘আমদানি-রফতানি পণ্যের লজিস্টিক দক্ষতা আমাদের রয়েছে। কয়েক বছর ধরে এর সুষ্ঠু ব্যবহারও আমরা করতে শুরু করেছি। তা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার থেকে শুরু করে সার্বিক হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হয়েছে। সামগ্রিক কারণেই লজিস্টিক সূচকে আমরা এগিয়েছি।’