Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সরকারি কর্মকর্তাদের ট্যাব বিতরণ শুরু হচ্ছে কাল

tabসরকারি কাজ আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে আগামীকাল শুরু হচ্ছে কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্যাব প্রদান কার্যক্রম। ই-গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পর্যায়ক্রমে ২৫ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে এসব ট্যাব বিতরণ করা হবে বলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) সূত্রে জানা গেছে।

দেশের ২৪ হাজারের বেশি সরকারি বিভিন্ন অফিসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও ই-সেবা সহজতর করার লক্ষ্যে ২০১০ সালের এপ্রিলে শুরু হয় ‘ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট (বাংলাগভনেট)’ শীর্ষক প্রকল্প। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে উপজেলাভিত্তিক পাবলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-২ (ইনফো সরকার)’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

chardike-ad

সুষ্ঠু ও সফলভাবে ই-গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য ‘ইনফো সরকার-২’-এর আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ হাজার ট্যাব দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান জাতীয় ডাটা সেন্টার আরো শক্তিশালী করা, ডাটা সেন্টারের ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার নির্মাণ ও বাংলাদেশ সচিবালয়ে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে দক্ষতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, সম্পদের অপচয় কমানো, পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করা ও সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ই-সেবার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি গতিশীলতা আসবে সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলোয় একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অংশগ্রহণ করা যাবে।

ইনফো-সরকার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২৪৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর বাকি ১ হাজার ৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ২ শতাংশ হার সুদের এ ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে এ প্রকল্পে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় চীন সরকার।

প্রকল্পটির আওতায় প্রতি উপজেলায় গড়ে ৩০টি এবং প্রতি জেলায় গড়ে ৫৫টি সরকারি অফিস একটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আসবে এসব অফিস। সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও ই-সার্ভিস আদান-প্রদান সহজতর করতে ৪২১টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ ৮০০টি স্থানে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এ কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিসিসি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও ১২টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, ইনফো-সরকার-২ প্রকল্পের আওতায় সরকারি কার্যক্রমকে আরো ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে সারা দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সিএমইসিকে। পরে গত বছরের মার্চে চীন সরকারের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। আর চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয় ২০১৩ সালের ৩১ মে। চুক্তি অনুযায়ী ৮৬ কোটি ইউয়ান প্রদান করছে ব্যাংকটি। এ অর্থ ব্যয়েই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপনসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাতে নেয়া বাংলাগভনেট প্রকল্প ২০১০ সালের এপ্রিলে অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় অনুমোদনের সময় হতে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোরীয় প্রতিষ্ঠান এসকে সিঅ্যান্ডসি কোম্পানি লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাগভনেট প্রকল্পের মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার পাশাপাশি সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়কে একটি পাবলিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ নেটওয়ার্কে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকায় ই-গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা এ নেটওয়ার্ক প্রয়োজনে সহজে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।

এ নেটওয়ার্ক যথাযথভাবে পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকায় বিসিসি কার্যালয়ে একটি জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র (এনআইসিটিসি) স্থাপন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একই ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা ডিআইসিটি হিসেবে পরিচিত হবে। এছাড়া নির্বাচিত উপজেলায় একই ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বণিকবার্তা।