Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৭৯ গডফাদার টেকনাফেই

sagor-3

সাগরপথে মানবপাচারে সীমান্ত শহর টেকনাফেই রয়েছে ৭৯ গডফাদার। তাদের শীর্ষে রয়েছেন সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্য, তার ভাই এবং একজন উপজেলা চেয়ারম্যান। ওই সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে অন্যান্য অভিযোগে জেলও খেটেছেন।

chardike-ad

কিন্তু মানবপাচার ব্যবসায় তার রয়েই গেছে। সম্প্রতি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের দেয়া একাধিক প্রতিবেদনে ওই ৭৯ জনের নাম উঠে এসেছে। সর্বোচ্চ দফতরগুলোতেও তাদের তালিকা রয়েছে।

এ দিকে একাধিক সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে মানবপাচার নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলেও এর মধ্যেও মানবপাচার অব্যাহত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ থাকলে এভাবে মানবপাচারের ঘটনা ঘটত না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশী পাচারকারী গডফাদার ছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের অনেক পাচারকারী চক্র এ অপকর্মে জড়িত রয়েছে। মাঝে মধ্যে পাচারকারীর নামে মামলা হলেও দেশী-বিদেশী অনেক পাচারকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে তাদের প্রভাবের কারণে। মানবপাচারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার ব্যবসায় হওয়ায় প্রভাবশালীদের সাথে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়েছেন।

টেকনাফ এলাকার মানবপাচারকারী গডফাদারের শীর্ষে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ওই সংসদ সদস্যের নাম। এরপরই রয়েছে তার ভাই যিনি একজন প্যানেল মেয়র। এরপর রয়েছে একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম। তিনিও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা বলে জানা যায়।

শুধু টেকনাফেই রয়েছে ৩১ জন গডফাদার। তাদের মধ্যে বাকিরা হলো, মো: ধলু হোসেন, মো: ইউনুছ, ইসমাইল, ফিরোজ আহমদ, দেলোয়ার, মো: সাহাব মিয়া, মো: শরীফ হোসেন, শরীফ হোসেন ভুলু, সাহেদুর রহমান নিপু, হামিদ হোসেন, জহির উদ্দিন ওরফে কানা জহির, মৌলভী আজিজ, নূর হাকিম মাঝি, নূর মোহাম্মদ মেম্বার, মৌলভী বশির ওরফে ভাইলা, নজির আহমদ ওরফে নজির ডাকাত, আবদুল হামিদ, গুরা মিয়া, মো: কাসেম ওরফে জিমা কাসেম, মো: ইসলাম ওরফে বাগু, জাফর আলম, আক্তার কামাল, শাহেদ কামাল, আবদুর গফুর, হেবজ রহমান ওরফে হেবজ মাঝি, মো: নুরুল হুদা, মো: নুরুল কবির ও আমান উল্লাহ ওরফে আনু। বাকি মানবপাচারকারীরা হলো বেলাল উদ্দিন, নূর হোসেন, নুরুল আলম, এনায়েত উল্লাহ, মো: সেলিম, মো: হোসেন, জাফর আহমদ, মো: শফিক, আবু তাহের, মো: জাফর, আলী মাঝি, শামসুল আলম, মো: সাব্বির আহমদ, মো: কামাল হোসেন, মো: হাসান, মো: কবির হোসেন, মো: কবির হোসেন (পিতা-নূর) সাদ্দাম, আবুল কালাম, মো: শরীফ, মো: লিটন, মো: আবুল হাসেম, মো: দলিল আহমদ, সিদ্দিক আহমদ, ফয়েজ, নুরুল ইসলাম ওরফে কালা পুতু, জাহাঙ্গীর, মীর আহমদ, মো: শাকের মাঝি, নুরু মাঝি, হাফেজ মোক্তার, মো: সৈয়দ আলম, আব্দুর রহিম, আলী আহমদ ওরফে আলী বলি, নুরুল ইসলাম মাঝি, আইয়ুব আলী মাঝি, আল মাসুদ, জাহাঙ্গীর, সোহাগ আবদুল্লাহ, কবির ওরফে ডা: কবির, মো: আলম ওরফে মাত আলম, এনায়েত উল্লাহ, মো: শামসুল আলম, আবদুস সালাম ওরফে আবদু কো¤পানি ও আজিজুল ইসলাম ওরফে পুতুইয়াসহ আরো তিনজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানবপাচারকারী গডফাদারদের শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় না আনা এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের আটক করে শাস্তি নিশ্চিত না করার কারণে মানবপাচার বন্ধ হচ্ছে না। চার-পাঁচ বছর আগেও কক্সবাজার জেলার লোকজন পাচারকারীদের ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেত। যাত্রাপথে ট্রলারসহ যেসব যাত্রী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ধরা পড়ত তাদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ যাত্রীই মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা। তখন মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো ফিশিং ট্রলার। এসব ট্রলার ছিল খুবই নি¤œমানের এবং ট্রলারগুলো মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ভেঙে ফেলা হতো।

গত এক থেকে দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারের কার্গো ট্রলার। বর্তমানে কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, পঞ্চগড়, যশোর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, জয়পুরহাট, সাতীরা, ময়মনসিংহ, ভোলা ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে সারা বছর মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের জন্য টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার বা মহেশখালীতে পাচারকারী চক্র সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কমিশনের ভিত্তিতে লোক সংগ্রহ করে কক্সবাজারে পাঠায়। এ সময় টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার বা মহেশখালীতে পাচারকারী চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দেয়া হয়। তারা ওই এলাকার দালালদের সাথে যোগাযোগ করে মালয়েশিয়ার পথে রওনা হয়।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পাচারকারীদের নাম ছাড়াও গোটা প্রক্রিয়ার বিশদ তথ্য উঠে এসেছে। এতসব সত্ত্বেও পাচার কমছে না। জানা গেছে, প্রতিরাতেই টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রলার।