Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিদেশ যাত্রা বন্ধের দাবি

aloconaসমুদ্রপথে বিদেশ যাত্রাকে ‘অপহরণ, মুক্তিপণ, হত্যা ও দাসত্বের পথে যাত্রা’ উল্লেখ করে দ্রুত সেটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট এনএএমআরবি। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের নেতারা।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত জাতীয় কর্মশালা থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। এনএএমআরবি (ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর মাইগ্রেন্টস রাইটস বাংলাদেশ) এই কর্মশালার আয়োজন করে।

chardike-ad

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিনা লুংডেল বলেন, সমুদ্রপথে মানব পাচার বিশাল বাণিজ্য। সমস্যা সমাধানে প্রত্যেক দেশকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করতে হবে। তবে কেন লোকজন এভাবে বিদেশে যাচ্ছে সেটিও খুঁজে বের করা দরকার। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের কারণ এক রকম, বাংলাদেশিদের আরেক রকম। কাজেই সেভাবেই সমাধান বের করতে হবে।

স্টিনা বলেন, মালয়েশিয়া অবৈধভাবে যাওয়া লোকদের কাজ দিচ্ছে। কারণ তারা সস্তায় শ্রম পাচ্ছে। আবার শ্রমিকের অধিকারও দিতে হচ্ছে না। অবৈধ এই শ্রম ও দাসত্বের চক্র বন্ধ করতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম বলেন, ‘স্বেচ্ছায় কিছু লোক গেলেও বেশির ভাগকেই প্রতারণা করে কিংবা জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অসহায় আমাদের নাগরিকদের বাঁচাতে হবে। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর রোহিঙ্গারা সমস্যাটি জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সেদিকেও নজর দিতে হবে।’

অভিবাসী বিষয়ক এশিয়ার বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট কারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ বাংলাদেশের সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘একবার ভাবুন মৃত মানুষগুলোর কথা। সাগরে ভেসে থাকা কিংবা কোনো ক্যাম্পে আটক মানুষগুলোর কথা। তাহলেই তাঁদের কষ্ট অনুভব করতে পারবেন’।

হারুন আল রশিদ বলেন, ‘আমরা বেসরকারি সংস্থার লোকজন যখন কথা বলি তখন সরকারের প্রতিনিধিরা থাকেন না। আবার তাদের বৈঠকেও আমাদের ডাকা হয় না। অথচ একসঙ্গে কাজ করেই সমাধান করতে হবে’। তিনি বলেন, পাচার প্রতিরোধে এক মন্ত্রণালয় আরেকটিকে দোষারোপ না করে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একইভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘এখন মানবপাচারের ঘটনা বাংলাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচিত। গণমাধ্যম অন্য কিছুতে ব্যস্ত হলেই আমরা হয়তো এই ঘটনা ভুলে যাব। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সারা জীবন কষ্ট বয়ে বেড়াবে। কাজেই আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে’।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, যাঁরা এভাবে যাচ্ছেন সবার আগে তাঁদের সচেতন করতে হবে। যেসব জেলা থেকে বেশি যাচ্ছে আগে সেখানে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এটি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাইকে মিলেই কাজটি করতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা ওয়ারবির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না সাগরে কত বাংলাদেশি নিখোঁজ। বেসরকারি সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে কাজ করলেও সরকারকেই সেটি খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু এখনো সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর থাইল্যান্ড পাচারের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু বাংলাদেশে রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে’।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পাচারের শিকার মোহাম্মদ সিরাজুল ও রেজাউল করিম তাঁদের সমুদ্র যাত্রা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। নিখোঁজ কয়েকজনের স্বজনেরা প্রিয় মানুষদের সন্ধানে আহাজারি করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের কর্মসূচি প্রধান হাসান ইমাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সারোয়াত বিনতে ইসলাম। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরা কর্মশালায় বক্তব্য দেন।

সৌজন্যেঃ প্রথন আলো