Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হালাল ফুড রপ্তানি করবে কোরিয়াঃ চাহিদা বাড়ছে কোরিয়াতেও

কোরিয়া হেরাল্ড অবলম্বনে মো. মহিবুল্লাহ, ৭ মে ২০১৩:

বিশ্ব বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও জনপ্রিয়তাসম্পন্ন অনেক পণ্যই মুসলিম দেশসমূহে কোন মূল্যই রাখে না। মুসলমানগণ ধর্মীয় রীতি মোতাবেক “বৈধ” ও “গ্রহণযোগ্য” পণ্যই কেবল ব্যবহার করে থাকেন যেগুলোকে সহজ ভাষায় বলা হয় “হালাল” পন্য। মূলত খাদ্য পণ্যেই হালাল সনদটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন পশুর মাংস খাওয়া যাবে তার যেমন ইসলামী বিধান রয়েছে, ঠিক তেমনি সেসব পশু কিভাবে জবাই করতে হবে তারও রয়েছে সুনির্দিষ্ট ইসলামিক রীতি। এমনিভাবে শাক-সবজিসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর ভিত্তি করে সেসব মুসলমানদের জন্য গ্রহণ করা “হালাল” না “হারাম” এই সনদ দেয়া হয়ে থাকে। 

chardike-ad

মুসলিম দেশসমূহে কোরিয়ান খাদ্যের তেমন চাহিদা না থাকায় এ দেশের খাদ্য প্রস্তুতকারীরা হালাল খাদ্য প্রস্তুতির ব্যাপারে এতদিন খুব একটা সচেতন ছিলেন না। তবে বিশ্বজুড়ে কোরিয়ান সংস্কৃতির কদর বাড়ার সাথে কোরিয়ান খাদ্যের প্রতিও নতুন করে আকৃষ্ট হচ্ছে দুনিয়াবাসী। এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই মুসলিম দেশগুলোও। এ অবস্থায় সিজে, নংশিম, পুলমুওনের মতো কোরিয়ার প্রথম সারির খাদ্য প্রস্তুতকারীরা তাদের রপ্তানিজাত খাদ্যে “হালাল” সনদ যুক্ত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।

২০১০ সালের হিসেব অনুসারে, বিশ্বজুড়ে ১৪০ টি দেশের ১৬০ কোটি মুসলমান (যাদের মধ্যে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোরিয়ায় বসবাসকারী) কেবলমাত্র হালাল খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন যার বাজার মূল্য প্রায় ৬৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে প্রসাধনী ও অন্যান্য পন্য হিসেব করলে এই অঙ্ক প্রায় দু’শ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এমন বিশাল একটি বাজার তাই হাতছাড়া করতে চাইছেন না কোরিয়ান রপ্তানিকারকেরা।

 
কোরিয়ায় বাড়ছে হালাল পণ্যের কদর

কোরিয়ায় মুসলিম দেশসমূহ থেকে আসা শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারেও বাড়ছে হালাল খাবারের চাহিদা। সিউলের হানিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ক্যাম্পাসে স্থাপন করেছে দেশের প্রথম হালাল ফুড ক্যাফেটেরিয়া। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেন, “আমাদের এই মুহূর্তে ৮০ জন মুসলিম শিক্ষার্থী আছেন এবং এই সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। আমাদের এই উদ্যোগটি কোরিয়ায় তাদের স্থায়ী হতে সাহায্য করবে।” দক্ষিণ চুংচেওং প্রদেশের আসানে অবস্থিত সানমুন বিশ্ববিদ্যালয়েও গেলো মাসের শুরুতে হালাল ফুড ক্যাফে খোলা হয়েছে।

এদিকে, কোরিয়ায় মুসলিম পর্যটকের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কোরিয়া পর্যটন কর্পোরেশনের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর দেড় লক্ষ ইন্দোনেশিয়ানসহ প্রায় তিন লক্ষ মুসলিম কোরিয়া ভ্রমণে এসেছিলেন। কোরিয়া হালাল ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ট্রেড এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কিম হে-জং বলেন, “কোরিয়ায় মুসলিম পর্যটকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আনন্দের খবর। আমাদের উচিৎ খাবারের ব্যাপারে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।” সিউলে ২০টির মতো হালাল রেস্টুরেন্ট থাকলেও রাজধানীর বাইরে হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা জানিয়ে কিম বলেন, “অনেক মুসলিমই বাধ্য হয়ে হালাল সার্টিফাইড নয় এমন খাবার খাচ্ছেন। আবার ধর্মীয় বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলেন এমন অনেকে নিশ্চিত না হয়ে কিছু খান না।” এ সংকট নিরসনে কোরিয়াজুড়ে হালাল রেস্টুরেন্ট সহজলভ্য করতে সরকারের তরফে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন কিম।

735102_10151462087677492_1780113539_nবিশ্বজুড়ে হালাল পণ্যের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে বৈ কমবে না-এমনটি অনুধাবন করতে পেরে নেসলে, বার্গার কিং, কেএফসির মতো স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো মুসলিম বিশ্বে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যসমূহ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে হালাল প্রক্রিয়া অনুসরণের চেষ্টা করছেন অনেক আগে থেকেই। এ খাতে কোরিয়ান খাদ্য প্রস্তুতকারীদের শুরুটা কিছুটা বিলম্বে হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিতে তাঁদের আরও বেশী তৎপর হতে হবে বলে মনে করছেন কোরিয়ার বানিজ্য সংশ্লিষ্টরা।