জীবনের এক পর্যায়ে বিয়ে নিয়ে ভাবনা কমবেশি সকলেরই থাকে। আর এই বিয়ের কথা আসলেই সামর্থ্য বা সাধ্যের টানাপোড়েনও সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে। বাদ দেয়া যাক বিয়ের আনুষঙ্গিক খরচের কথা। আপনি কিভাবে বরযাত্রী যাবেন সেটা ভেবে দেখেছেন কি? হয়তো ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বিকল্প কোনো মাধ্যমে গেলেন। কিন্তু যেভাবেই যান না কেন ইথিওপিয়ার অমলেশ জেফরির উদ্ভাবনী শক্তির কাছে আপনি কিংবা আমরা কিছুই না। টানা দশ বছরের পরিশ্রমের ফলে নিজের বানানো ছোট্টো বিমান নিয়েই তিনি রওনা দিচ্ছেন হবু স্ত্রীকে বিয়ে করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।
হয়তো অমলেশ বিয়েকে লক্ষ্য করেই বিমানটি তৈরি করেননি। কিন্তু সময় আর জীবনের কোনো এক বাঁকে নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটির সঙ্গে তার আবিষ্কৃত বিমানটিকেও জুড়ে দিয়েছেন। একবার দুবার নয়, অনেকবারের ব্যর্থতার জের হিসেবেই হাতের কাছে থাকা নানান উপাদান দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন ওই বিমান। অবশ্য এখন পর্যন্ত একটা বিষয়ে কিন্তু রহস্য থেকেই যায়, ইথিওপিয়ার মতো অনুন্নত একটি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক কিভাবে আস্ত একটি বিমান তৈরি করে ফেলছেন। যদি এই রহস্য ভেদ করার আগ্রহ থাকে, চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন অমলেশ।
ইথিওপিয়ার অমলেশ জেফরি বিমানচালনায় পারদর্শী। নিজ উদ্যেগে বিয়ের জন্য তৈরি করে ফেললেন কে-৫৭০ নামের একটি বিমান। এরপর হবু বউকে বিয়ের পরে নিয়ে আসার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের অভিনব কায়দায় বানানো বিমান। প্রথমে বিমানটি আদ্দিস আবাবার কাছে একটি জায়গায় পরীক্ষামূলক মহরা দেয়া হয়। আর এটা তার জন্য সত্যিই খুব বিস্ময়কর। কারণ এর আগে এমন বিমান কখনোই চালাননি তিনি। বিমানটি দিয়ে তিনি প্রথম ইথিওপিয়ার ৪০ কি.মি পর্যন্ত জায়গা ঘুড়ে এসেছিলেন। সেই সময় বিমানের একটি পিলার পড়ে গেলে আবারও কাঠ দিয়ে সেটিকে জোড়া লাগানো হয়। সেই সময় কিছুটা হতাশ হলেও এই ভেঙ্গে পড়া পিলারটি তার পুনরায় কাজ করার প্রেরণা যোগায়। বিমানের ইঞ্জিনটি তৈরি করা হয়েছে ৭৮ হর্সপাওয়ারের(অশ্বশক্তি)।
ইউটিউবে দেখে বিমানটি তৈরি করতে তার প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে। বিমান তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে সুদূর অষ্ট্রেলিয়া থেকে। প্রথমে কয়েকবার চালাতে ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতাই তাকে পরর্বতীতে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সুজুকি মোটরসাইকেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি বিমানটি দিয়ে ইথিওপিয়ার বেশ কয়েক কিলোমিটার ঘুড়ে আসা গেলেও মাঝপথে থেমে যেত বিমানটি। নভেম্বরের শুরুর দিকে বিমানটি নিয়ে তিনি আবার যাত্রা করলেও ব্যর্থ হতে হয় তাকে। পরে কিছু বিমান পারদর্শী দিয়ে বিমানটি পর্যবেক্ষন করালে তারা তাকে নতুন করে বিমানটি ঢেলে সাজাতে সাহায্য করে। তবে বিমান তৈরির এই উদ্ভট কাজের জন্য তা পরিবারের পক্ষ থেকে আসে নানান বাধা বিপত্তি। এত কিছুর পরেও তার বিমান তৈরির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিবার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে যাত্রা করেছে আকাশের পথে। একদিন সফল হবে বলে এই আশায়।
তবে জেফরির আগেও অনেকে এমন আছেন যারা বিমান তৈরির জন্য নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল। তবে ২০০৭ সালের দিকে মুবারোক মুহাম্মদ আব্দুল হাই নামের এক ব্যাক্তি হেলিকপ্টার বানিয়ে আকাশের পথে যাত্রা করলেও ১৩বারের সময় তিনি সফল হয়েছিলেন।(বাংলামেইল)