Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শীর্ষ দশে দুই ধাপ এগিয়ে চতুর্থ বাংলাদেশ

garmentsএকক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশের পোশাক খাতে রফতানি আয়ের ২১ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত বছরের শেষ দিকেও দেশটিতে বস্ত্র রফতানির পরিমাণ বিবেচনায় শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-মার্চ) আরো দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যমতে, ২০১৬ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে যুক্তরাষ্ট্রে বস্ত্র রফতানির পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে চীন। দ্বিতীয় থেকে দশম স্থানের দেশগুলো হলো যথাক্রমে— ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও কম্বোডিয়া।

chardike-ad

সূত্র অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া বস্ত্র ও পোশাকের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি ১৭ লাখ বর্গমিটার। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটিতে বস্ত্র ও পোশাক রফতানি হয়েছে ৫৭ কোটি ২৩ লাখ বর্গমিটার। এ হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে রফতানির পরিমাণ বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের বস্ত্র ও পোশাক রফতানির পরিমাণ ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ বর্গমিটার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির বস্ত্র ও পোশাক রফতানি কমেছে ৫ শতাংশ।

২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক খাতে রফতানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ওই সময় শীর্ষ দশে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। প্রথম থেকে দশম স্থানে থাকা দেশগুলো ছিল যথাক্রমে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মেক্সিকো, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া ও হন্ডুরাস। ২০১৫ সালের শেষেও একই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

জানা গেছে, চলতি বছর প্রথম প্রান্তিক শেষে মার্কিন বাজারে বস্ত্র ও পোশাক রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১৪৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ডলার। এ হিসাবে বস্ত্র ও পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। মার্কিন বাজারে রফতানি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পোশাকপণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলাজাত ও কৃত্রিম সুতা-কাপড়ের তৈরি কটন ট্রাউজার, স্ল্যাক্স, নিট শার্ট।

এদিকে রফতানি আয় বাড়লেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বস্ত্র ও পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়সীমায় রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ হলেও ২০১৫ সালের একই সময়সীমায় তা দাঁড়িয়েছিল ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে। আবার চলতি বছরের প্রথম দুই মাস (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) শেষে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধারাবাহিক শিল্প দুর্ঘটনার পর শ্রম নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিকভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। পোশাক খাতে সাময়িকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তা অনেকটাই কেটে গেছে। কারণ ক্রেতা ও সরবরাহকারীর মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কে আস্থা বেড়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রফতানি আয়ে ও পরিমাণে। কিন্তু মার্কিন বাজারে বর্তমানে মন্দা দেখা দিয়েছে। কমেছে দেশটির আমদানিকারকদের ক্রয়-সামর্থ্য। আবার কাঁচামালের পাশাপাশি পোশাকের মূল্যও হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মার্কিন বাজারে পরিমাণের দিক থেকে দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়া খুবই ইতিবাচক ঘটনা। আমাদের তৈরি পোশাকের শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। মূল্য সংযোজন বিচারে নিম্ন ও মধ্যম ধারার পোশাকপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। মন্দার মধ্যেও ভোক্তা বা গ্রাহকদের কাছে এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় বেড়েছে।’

অন্যদিকে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসা নিয়ে তার বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাজারে বস্ত্র ও পোশাকের কাঁচামালের দামও কমেছে। এর ধারাবাহিকতায় পোশাকেরও মূল্য কমেছে। বর্তমানে ক্রয়াদেশ ধরে রাখার জন্যই আমরা কম দামে পোশাক রফতানি করছি। আবার প্রতিযোগী দেশগুলোরও সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে।

পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, পরিমাণ ও আয় উভয় বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বস্ত্র ও পোশাক রফতানি বাড়লেও সরবরাহকারী কারখানা মালিকরা খুব বেশি লাভবান হননি। কারণ কারখানার কমপ্লায়েন্স ও জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য কমেছে। ফলে ক্রেতারাও এখন বেশি দামে পণ্য আমদানি করছেন না।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে গত এক বছরে দেশে তৈরি পোশাকের উত্পাদন ব্যয় বেড়েছে গড়ে ১০ শতাংশ। আর এর বিপরীতে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে মূল্য কমিয়েছেন ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা। বণিকবার্তা।