Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অদ্ভুত ১০ প্রথা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অদ্ভুত ১০ প্রথা

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ী, অতীতে বহু নারী কেলেঙ্কারি, ট্যাক্স ফাঁকি, প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইমেইল বিতর্ক এসব নিয়ে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্বজুড়েই ‍উত্তাপ ছড়িয়েছে। ফলে প্রেসিডেনসিয়াল বিতর্কগুলোতে নজর ছিল সবার। প্রত্যেকটি বিতর্কেই দুই প্রার্থী পরস্পরের সমালোচনা ও ব্যক্তিগত আক্রমণে ছিলেন মুখর। তবে তাদের এ বাগযুদ্ধ যতটা না উত্তেজনাপূর্ণ ছিল তার চেয়ে বেশি হতাশার- এমনটাই মনে করছেন মার্কিনরা।

সে যাই হোক, এখানে আমাদের আলোচনার বিষয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন এবং ভোটকেন্দ্রগুলোর কিছু অদ্ভুত প্রথা। বহু বছর ধরে চলে আসছে এসব প্রথা। অনেকে কাছে উদ্ভট মনে হতে পারে। তবে সেই সময়কার মার্কিন সমাজ ব্যবস্থা ও মানসিকতা বিচেনায় এসব প্রথা বেশ কার্যকর ছিল।

chardike-ad

১. নির্বাচনের দিন মদ বিক্রি নিষিদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্রে মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় বিক্রিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভোটগ্রহণের দিন (৮ নভেম্বর) বেশ কিছু শহর ও কাউন্টিতে মদ বিক্রি হয় না। অনেক বছর থেকেই তারা এ চর্চা চলে আসছে। উদাহারণ স্বরূপ বলা যায়, ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের কথা। এমনকি ওই রাজ্যের ১৮টি শহর ও হুইসার ৭টি কাউন্টিতে স্থানীয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৮ নভেম্বর মদ বিক্রি নিষিদ্ধ।

vote01

এই প্রথার শুরু প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় একজন ভিনদেশীর মাধ্যমে। ১৭৫৮ সালে ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভার্জিনিয়ার নিম্ন আদালত ‘হাউজ অব বার্জেস’ এর নির্দেশে এটি চালু হয়। তবে যাইহোক যুক্তরাষ্ট্রের জনক জর্জ ওয়াশিংটন তার নির্বাচনী প্রচারণায় মোট বাজেটের ৫০ পাউন্ড খরচ করেছিলেন মদের পেছনে। ওই সময়ে তার ১৬০ গ্যালন মদ বিতরণ নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে অনেকে মনে করেন।

এছাড়া জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৯৭ সালে ভার্জিনিয়াতে একটি হুইস্কির পানশালা চালু করেন। ১৭৯৯ সালে তিনি যখন মারা যান তখন তা দেশের অন্যতম বৃহৎ পানশালায় পরিণত হয়।

২. নির্বাচনে নাস্তিকদের বর্জন
যদিও যুক্তরাষ্ট্রে চার্চ ও রাষ্ট্রকে আলাদা বিবেচনা করা হয় তবুও কিছু অঙ্গরাজ্য এ আইনের তোয়াক্কা করে না। তাদের কথা হলো নির্বাচনের প্রার্থীকে কমপক্ষে স্রষ্টায় বিশ্বাসী হতে হবে।

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে প্রার্থীর ধর্মীয় জ্ঞানের যোগ্যতার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের বিল অব রাইটসের অনুচ্ছেদ-১ অনুসারে প্রার্থীকে সর্বশক্তিমান হিসেবে একজন আছেন তার (স্রষ্টার) স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া সাউথ ক্যারোলাইনা, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিসিসিপি, মেরিল্যান্ড, আরকানসাস ও টেনেসি অঙ্গরাজ্যেও একই ধরনের আইন রয়েছে।

৩. ভোটিং স্টিকারের ব্যবহার
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে স্টিকারের প্রচলন কবে শুরু হয় তা স্পষ্ট নয়, তবে দেশটিতে ভোটারদের প্রায়ই দেখা যায় স্টিকার প্রতীক বহন করতে। যেখানে লেখা থাকে ভোট কেন্দ্রেই ‘আমি ভোট দিয়েছি’।

তবে ফ্লোরিডাভিত্তিক একটি কোম্পানি দাবি করেছে, সারাদেশে ব্যবহৃত মূল স্টিকারটি ১৯৮৬ সালে তারা প্রথম মুদ্রণ করেছিল।

এছাড়া কিছু অঙ্গরাজ্যে নিজস্ব স্টিকার ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে যেমন: জর্জিয়া। তবে শিকাগোতে স্টিকারের ব্যবহার পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।

৪. ভোটিং বুথে অবস্থানের সময়সীমা
যুক্তরাষ্ট্রে একজন নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটিং বুথে কত সময় অবস্থান করতে পারবেন, এক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্নতা। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা প্রাথমিক নির্বাচনে ৩ মিনিট এবং সাধারণ ও পৌর নির্বাচনে ২ মিনিট সময় বুথে থাকতে পারবেন। আলবামা অঙ্গরাজ্যে ভোটাররা পান ৪ মিনিট। তবে প্রয়োজন হলে আরো অতিরিক্ত ৫ মিনিট সময় দেয়া হয়।

৫. নির্বোধ ও পাগলের ভোট দেয়া নিষিদ্ধ
কেন্টাকির সংবিধানে নির্বোধ ও পাগল ব্যক্তিদের জন্য ভোট দেয়া নিষেধ। তবে একজন বিচারক তাকে অবশ্যই পাগল বা নির্বোধ বলে ঘোষণা দিতে হবে। এ আইন ওহাইও, নিউ মেক্সিকো ও মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের সংবিধানেও আছে। তারা এর দ্বারা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকেই নির্দেশ করেছে।

৬. একাধিকবার ভোট দেয়ার সুযোগ
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নির্ধারিত দিনের আগেও ভোট দিতে পারেন। তাই কখনো যদি মনে হয় তিনি যে প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন সে অযোগ্য তাহলে তিনি নির্ধারিত দিনের আগে আবারো তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। অর্থাৎ ব্যালট পেপার পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। তবে যতবারই ভোট দেন না কেন ভোট কিন্তু একটাই গণনা হবে।

কমপক্ষে সাতটি অঙ্গরাজ্যে এই নীতির অনুমোদন আছে। যে কারণে এ বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের দ্বিতীয়বার ভোট দেয়ার অনুরোধ জানান। ওই অঙ্গরাজ্যে তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ আছে। মিনেসোটা, পেনসিলভানিয়া, নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট ও মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যেও এ সুযোগ আছে।

৭. ভোটকেন্দ্রে কুকুরছানার দল
তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে একদল রাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবক আছে যারা কুকুর ছানা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকায় কুকুর ছানা পোষা মানুষের কাছে খুবই পছন্দনীয়। যেমন: এবছর নেক্সটজেন ক্লাইমেট গ্রুপটি তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে আইওয়া, উত্তর ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া, নেভাডা ও নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ভোট কেন্দ্রে কুকুরছানার দল নিয়ে উপস্থিত হয়।

এবার তারা বহুল ব্যবহৃত মোবাইল গেম পোকেমন গো ও টিনডার নিয়ে ভোটারদের মন জয় করারও চেষ্টা করছে।

vote03

এছাড়া ভোটারদের মন জয় করতে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয় নেক্সটজেন গ্রুপটি। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করে থাকে।

৮. মল্লযুদ্ধ নিষিদ্ধ
ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের পুরনো প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিষেধ। যেমন: মল্লযুদ্ধ, প্রতিযোগিতাপূর্ণ খেলা, পাঞ্জা লড়া ইত্যাদি। টেনেসি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আয়োজন করলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে।

৯. মহাকাশচারীদের ভোট দেয়ার সুযোগ
১৯৯৭ সালে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে নভোচারীদের ভোট প্রয়োগের জন্য একটি বিল পাস হয়। তৎকালীন গভর্নর জর্জ ডব্লিউ বুশ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এ আইনের মাধ্যমে মহাকাশ থেকেই প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়।

vote02

নাসার সহযোগিতায় নভোচারীরা ভোট দিতে ই-মেইলের মাধ্যমে নিজ নামে একটি ব্যালট পেপার পাবেন। এবং ভোট দেয়ার পর তা অঙ্গরাজ্যের কাউন্টি অফিসে ই-মেইলটি রেকর্ডভুক্ত হয়।

নভোচারী কেট রুবিনস ও শেন কিম্বু তাদের ভোট মহাকাশ থেকে দিয়েছিলেন।

১০. অভিষেকে বাইবেল পছন্দের সুযোগ
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও ওই শপথ অনুষ্ঠানে পছন্দমত বাইবেল ছুঁয়ে শপথ নেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এ প্রথাটি চালু হয় প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কর্তৃক তার অভিষেক অনুষ্ঠানে ম্যাসোনিক বাইবেল ব্যবহারের পর থেকে।

১৮২৫ সালে প্রেসিডেন্ট জন কুইন্সি অ্যাডামস শপথ নিতে ব্যবহার করেছিলেন যুক্তরাষ্টের আইন বইটি। যদিও ১৯০২ সালে প্রথম অভিষেক অনুষ্ঠানে শপথ নিতে থিওডোর রুজভেল্ট কোনো বই ব্যবহার করেননি।

অন্য প্রেসিডেন্টরা প্রতীকীভাবে বাইবেলের কিছু নির্দিষ্ট শ্লোক ব্যবহার করেন।

ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট তার চারটি অভিষেক অনুষ্ঠানেই বাইবেলের একটি শ্লোকটি ব্যবহার করেছেন।

vote04

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার দ্বিতীয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আব্রাহাম লিঙ্কনের ব্যবহৃত বাইবেলটি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ট্রাভেলিং বাইবেলটি ছুঁয়ে শপথগ্রহণ করেন।

সূত্র: বিবিসি