দেশের ৩৩ শতাংশ গৃহস্থালির কোনো না কোনো সদস্য কাজের জন্য বিদেশে থাকেন। এ ধরনের গৃহস্থালির মধ্যে আবার ২৭ শতাংশ পরিবার রয়েছে, যার বিদেশে থাকা সদস্যটি দেশে ফিরে এসেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০১৬: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এ তথ্য জানায়।
রামরুর চেয়্যার অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, সরকারের কাছে শুধু বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের তথ্য রয়েছে। ফিরে আশা শ্রমিকদের কোনো তথ্য নেই। তাই কতজন বাংলাদেশী এ মুহূর্তে বিদেশে রয়েছেন, এ নিয়ে একটি বিভ্রান্তি রয়েছে। ১৪টি জেলায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময় বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরে এসেছেন অন্তত ২৭ শতাংশ বাংলাদেশী। সাধারণত কেউ ১০ বছরের বেশি বিদেশে থাকেন না। তাই এক কোটি বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করছেন তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক কোটির মতো লোক কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন, কথাটি সত্যি। তারা সবাই এখনো বিদেশে রয়েছেন, বিষয়টি তো এ রকম নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে অন্তত ২৭ শতাংশ দেশে ফিরে এসেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বিদেশে শ্রম অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার বিদেশে গেলেও ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত গেছেন ৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৭৬৯ জন, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া চলতি বছর যত শ্রমিক বিদেশ গেছেন, তার মধ্যেও ১৬ শতাংশ নারী। শ্রম অভিবাসীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বাড়লেও, পুরুষের অনুপাত কমেছে। গত বছর মোট অভিবাসী শ্রমিকের ২২ দশমিক ৮ শতাংশ ছিলেন নারী। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গেছেন ওমানে। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে শ্রমিক গেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৮০৬ জন। জেলাগতভাবে শ্রম অভিবাসীর সংখ্যা বেশি কুমিল্লায়। বিদেশগামী শ্রমিকদের মধ্যে জেলাটির অধিবাসীর সংখ্যা ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ বছর দক্ষ কর্মীর অভিবাসন বেড়েছে ৫ শতাংশ। এছাড়া লিবিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের অভিবাসন নিষিদ্ধ হলেও অনেকেই দেশটিতে অবৈধভাবে যাচ্ছেন।
নভেম্বর পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের (২০১৫) তুলনায় ১১ শতাংশ কম। ২০১৫ সালে মোট রেমিট্যান্স ছিল ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রামরু। বণিকবার্তা।