Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

iunosনোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ভারতের পাঞ্জাবে অবস্থিত চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।

রোববার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার এক দিনের সফরে ভারতের পাঞ্জাবে অবস্থিত চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। তার সফরকালে প্রখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এর ‘নির্বাহী পরিষদ’-এর সদস্য হতে প্রফেসর ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যলয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যেখানে প্রফেসর ইউনূস সমাবর্তন বক্তা হিসেবে যোগ দিলে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্পণ করা হয়।

chardike-ad
 প্রফেসর ইউনূস চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিনিয়র শিক্ষকরা তাকে পাঞ্জাবের ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ কায়দায় অভ্যর্থনা জানান। বিশ্ববিদালয়টির পুরো ক্যাম্পাস প্রফেসর ইউনূসের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত ছিল।

উপাচার্য তার একটি উপস্থাপনায় প্রফেসর ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও ঘটনাবলী বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবনশীল পাঠ্যসূচির উপর জোর দেন যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০টি দেশ থেকে ছাত্র আকৃষ্ট করতে পেরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপউপাচার্য, নির্বাহী পরিষদ সদস্য, বিজনেস স্কুলসমূহের ডিন ও অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকগণ পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়টি কী ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

বৈঠকে উপাচার্য ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের ইউনূস সেন্টারের সাথে যৌথভাবে চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘ইউনূস সামাজিক ব্যবসা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সামাজিক ব্যবসার উপর বিভিন্ন কোর্স প্রদান ছাড়াও কেন্দ্রটি প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক ব্যবসার উপর জাতীয় ফোরামের আয়োজন করবে।

প্রফেসর ইউনূসকে এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন ল্যাবরেটরিগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় যেগুলো বিভিন্ন খ্যাতনামা ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। প্রফেসর ইউনূসেরই আইডিয়ায় অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টারটিও তিনি পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য যে, চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতি বছর ২৫টির বেশি পেটেন্ট নিবন্ধিত করে থাকে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর ইউনূসকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ ডিগ্রিতে ভূষিত করেন।

উপাচার্য বলেন যে, তিনি গত ৬ বছর ধরে প্রফেসর ইউনূসকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এ বছর প্রফেসর ইউনূসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আনতে সক্ষম হয়েছেন। প্রফেসর ইউনূস তার বক্তৃতায় সদ্য গ্র্যাজুয়েটদেরকে তাদের জ্ঞান সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করতে এবং যেসব ক্ষেত্রে কারো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই সেখানেও নির্ভয়ে অনুসন্ধান চালাতে আহ্বান জানান।

তিনি উল্লেখ করেন যে, ব্যাংকিংয়ে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি ভুল নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে কেননা ব্যাংক তাকেই টাকা দেয় যার এরই মধ্যে অনেক টাকা আছে, তাকে নয় যার কোনো টাকা নেই। এ কারণেই তিনি দরিদ্র মানুষদের হাতে পূঁজি তুলে দিতে গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি করেছিলেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটদেরকে উদ্যোক্তা হতে এবং চাকরি না খুঁজে বরং চাকরি সৃষ্টির চেষ্টা করতে উৎসাহিত করেন।

তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তারা ভাগ্যবান কেননা তারা এমন এক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে বের হচ্ছে যখন বিস্ময়কর সব প্রযুক্তি একজন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন উদ্ভাবনশীল উপায়ে তার সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের কাজটি অনেক সহজ করে দিয়েছে।

তারা আরো ভাগ্যবান যে, তারা এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তার ছাত্রদেরকে সমাজের সেবার জন্য প্রস্তুত করা। সামাজিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও তারুণ্যের সম্মিলিত শক্তি কীভাবে একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে পারে তা তিনি তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেন।

প্রফেসর ইউনূস গ্র্যাজুয়েটদেরকে তিনটি ‘শূন্য’র – অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণের বৈশ্বিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করারও আহ্বান জানান।

উপাচার্য ঘোষণা করেন যে, প্রফেসর ইউনূস চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদের সদস্য হতে সম্মত হওয়ায় তার বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত।