Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দেশে প্রবাসী আয়ের ৪৯.২৮ শতাংশ আসে অবৈধ পথে

remittanceদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ নিয়ে ২০১৩ সালে একটি জরিপ চালায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ওই জরিপে দেখা যায়, বছরটিতে প্রবাসী আয়ের ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশই আসে ব্যাংকিং চ্যানেলে। বাকি ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। ২০১৬ সালে এ নিয়ে আরো একটি জরিপ চালায় বিবিএস। তার ফলাফলে দেখা যায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ আগের চেয়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৬ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ লাখ ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এ অর্থ বৈধ-অবৈধ পথে আসা মোট রেমিট্যান্সের ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর বাইরে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।

chardike-ad

ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে মোবাইল ব্যাংকিং, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, ডাকঘর, পরিচিত ব্যক্তি ও হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্স বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবভুক্ত হচ্ছে না।

ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে কোন মাধ্যমে কী হারে প্রবাসী আয় আসছে, তারও একটা পরিসংখ্যান দিয়েছে বিবিএস। সংস্থাটির তথ্যমতে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মাধ্যমে আসছে ১২ দশমিক ৬৬ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবাসী আয়। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে ১২ দশমিক ৩১, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ৫ দশমিক ৪৫, পরিচিতজনের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৮৫, ডাকঘরে শূন্য দশমিক ২১ ও অন্যান্য মাধ্যমে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

ব্যাংকিং চ্যানেলবহির্ভূত রেমিট্যান্স প্রেরণে এখনই লাগাম টানতে না পারলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ভবিষ্যতে আরো নিম্নগামী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান শ্রমবাজারগুলোয় রোডশো করে বৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠাতে শ্রমিকদের উত্সাহিত করতে হবে। পদক্ষেপ নিতে হবে রেমিট্যান্স প্রেরণে খরচ কমানোরও। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।

দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০১৪-১৫ অর্থবছর। অর্থবছরটিতে প্রবাসীরা বৈধ পথে দেশে পাঠান ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার বা ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছর তা আড়াই শতাংশ কমে যায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

ব্যাংকিং বা বৈধ চ্যানেলে প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ কমার পেছনে শুধু মোবাইল ব্যাংকিংই দায়ী, বিষয়টা এমন নয় বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, প্রবাসীদের প্রকৃত আয় কমার কারণে রেমিট্যান্স কমেছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের কোনো ধরনের প্রণোদনা দেয়া যায় কিনা, সেটি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের অর্থ পাঠানোর খরচ কমানোসহ পদ্ধতিগত জটিলতা কমাতেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো ধরনের অপব্যবহার বা পাচার প্রতিরোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এজেন্টদের তদারক করা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রেমিট্যান্সের প্রায় ২৫ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। রেমিট্যান্স আহরণকারী অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকবহির্ভূত খাতে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর প্রভাব সব ব্যাংকের ওপরই পড়েছে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, প্রযুক্তি ও মোবাইল ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কারণে প্রবাসীরা অবৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উত্সাহিত হচ্ছেন। যদিও এ মাধ্যমে তারা দ্রুততার সঙ্গে এবং কম খরচে অর্থ পাঠাতে পারছেন। তাই অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈধ পথকে বেছে নিতে চোরের চেয়ে পুলিশকে বেশি শক্তিশালী হতে হবে। তা না হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। পর্যালোচনা ও নীতিসহায়তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তবে ব্যাংকবহির্ভূত যেসব মাধ্যমে অর্থ দেশে আসছে, সেগুলোকে কীভাবে বৈধতা দেয়া যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমলেও অন্যান্য মাধ্যমে তা বাড়ছে। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে হিসাবভুক্ত হচ্ছে না। এতে প্রবাসী আয়ের সঠিক তথ্য উঠে আসছে না। ফলে এটা বলা যৌক্তিক হবে না যে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ কমছে। ব্যাংকবহির্ভূত মাধ্যমে প্রেরিত অর্থ সঠিকভাবে হিসাবভুক্ত করতে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এদের একটি সমঝোতা করানো হবে। আর তার জন্য কোনো ধরনের চার্জ বা ফি ধার্য করা হবে না। তাহলে রেমিট্যান্সের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদির। তিনি বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীর উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা বৈধভাবে কিংবা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা অর্থ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা বিকাশের রয়েছে। সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বৈধ পন্থায় সবার কাছে কম সময়েই পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বিকাশ সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।