Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শুল্ক ও ভ্যাট : নিত্যব্যবহার্য পণ্যে বেশি রেখে বিলাসপণ্যে ছাড়

buddgetনিত্যব্যবহার্য পণ্যগুলোর অন্যতম সাবান ও ডিটারজেন্ট। এ দুটি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভোক্তাপর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অথচ বিলাসপণ্য হওয়ার পরও সানস্ক্রিনসহ হাত, নখ বা পায়ের প্রসাধনসামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ধরা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। একইভাবে সর্বজনব্যবহূত হওয়া সত্ত্বেও বৈদ্যুতিক পাখায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর বিপরীতে কম ব্যবহূত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রকে দেয়া হয়েছে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা।

এভাবে নিত্যব্যবহার্য আরো অনেক পণ্যে বাড়তি শুল্ক-ভ্যাট আরোপ করে অপেক্ষাকৃত ছাড় দেয়া হয়েছে অপ্রচলিত ও বিলাসপণ্যে। রাজস্বের লক্ষ্য অর্জনের তাগিদ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ উদ্যোগ নিলেও ব্যবসায়ীরা একে দেখছেন বাজেটের অসঙ্গতি হিসেবে।

chardike-ad

প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিত্যব্যবহার্য নারকেল তেলের সরবরাহ পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও পরিশোধিত নারকেল তেল আমদানিতে ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে। প্রসাধনসামগ্রীর মধ্যে শ্যাম্পুও নিত্যব্যবহার্যের মধ্যে পড়ে। ভোক্তাপর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি একই হারে সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে পণ্যটির ওপর। এর বিপরীতে বিলাসবহুল ও তুলনামূলক অপ্রচলিত হওয়ার পরও কেশ স্থায়ীভাবে তরঙ্গায়িত অথবা সরল করার প্রসাধনকে অপেক্ষাকৃত ছাড় দিয়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে কেশ বার্নিশ ও সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্টের ওপরও।

বাজেটে ভ্যাট-শুল্ক অব্যাহতি বা হ্রাস-বৃদ্ধির এসব প্রস্তাব অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে ছাড় দেয়া হলেও অপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য এ তালিকায় ঢুকে পড়েছে। আবার মানুষের নিত্যব্যবহার্য অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে। বাজেটের প্রস্তাবনা অনুযায়ী আবাসন খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রী জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এতে পরিবর্তন আনবেন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব ধরনের সুতা ও পোশাকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলেও বাইরে রাখা হয়েছে রেশম ও উলকে। একইভাবে বিলাসপণ্য হওয়ার পরও হীরায় (অমসৃণ) সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মতোই ২৫ শতাংশ। তবে মসৃণ হীরার সম্পূরক শুল্ক কিছুটা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবনায় ১ হাজার ৪৩টি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা দিলেও এর মধ্যে অনেক পণ্য রয়েছে, যেগুলোর ব্যবহার সেভাবে নেই। ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে আড়াই কেজি পর্যন্ত কাঁটা ছাড়ানো মাছ, ভোগযোগ্য মাছের গুঁড়া ও আমদানিকৃত পাখির ডিম। ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে লেকোস্ট শিম, সামুদ্রিক আগাছা ও অন্যান্য

সমুদ্রশৈবালের মতো অপ্রচলিত পণ্যেও। অন্যদিকে অব্যাহতির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে গৃহস্থালিতে নিত্যব্যবহার্য ১৯ ধরনের প্লাস্টিকপণ্যকে। আগের আইনে ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসব পণ্য সব শ্রেণীর মানুষের বাসাবাড়িতেই প্রয়োজন হয়।

শুধু রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তা থেকেই এনবিআর এমনটা করেছে বলে অভিযোগ করেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এনবিআর ভ্যাট অব্যাহতির যেসব পণ্যের নাম দিয়েছে, তার অধিকাংশই হাস্যকর। অপ্রচলিত ও অনেক বিলাসপণ্যে অব্যাহতি দিয়ে তালিকা বড় করা হয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, মসলা, সাবানসহ বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাটের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

রাস্তার পাশের একটি সাধারণ মানের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য গুনতে হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এতদিন নন-এসি রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হতো। বিদ্যুত্ বিলসহ ১৫ ধরনের পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট (সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে) দেয়ার সুযোগ বাতিল করে ১৫ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। রডসহ ৭০ ধরনের পণ্য ও সেবায় ট্যারিফ মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা আর থাকছে না। সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যবহার্য হ্যান্ডলুম পণ্য বিশেষ করে লুুঙ্গি, গামছাজাতীয় পণ্য, স্বল্পমূল্যের জুতা, হাওয়াই চপ্পল ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় নেই। এসব পণ্যে বাড়তি ভ্যাট দিতে হলে তার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতি বা কমানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। দেশে প্রস্তুত হয় না এমন পণ্য বিলাসবহুল হলেও অনেক সময়ই শুল্ক ছাড় দেয়া হয়। তবে দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চাইলে প্রচলিত পণ্যে বেশি ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।