Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল বাংলাদেশ বিমান

Biman-Bangladesh-Airlinesচাকার সেফটি পিন না খুলে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট বিপজ্জনকভাবে আকাশে উড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এয়ারক্রাফটটি ফ্লাই করার পর পাইলট চাকাগুলো ভেতরে ঢুকাতে পারছিলেন না। ফলে বাধ্য হয়ে আকাশে তেল পুড়িয়ে ৫০ মিনিট পর ফের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন বিমানটি।

গত ২ জুন ঢাকা-ব্যাংককের একটি ফ্লাইটে (বোয়িং-৩৭৩) ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে। পাইলট ও গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিমান ও সিভিল এভিয়েশন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

chardike-ad

বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে জানানোও হয়নি। তিনি বলেন, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেবেন বলেও জানান।

বিমানের এমডি ক্যাপ্টেন (অব.) এম মোসাদ্দিক আহম্মেদ বর্তমানে ট্রেনিংয়ের জন্য দেশের বাইরে আছেন। তার পদে দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদ। এ ঘটনায় ক্যাপ্টেন জামিল কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

ওই দিন এয়ারক্রাফটির ক্যাপ্টেন ছিলেন পাইলট নিক্সন বাড়ই। নিয়ম অনুযায়ী ল্যান্ডব্যাক করার পর লগ বইতে পুরো ঘটনাটি পাইলটের লিখে রাখার কথা। কিন্তু পাইলট নিক্সন বাড়ই তা না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগ তাদের লগ বইতে ওই ফ্লাইটের ল্যান্ডিং গিয়ারের গ্রাউন্ড সেফটি পিন খোলা না থাকার কথা উল্লেখ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনার ২ দিন পর বিমান কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

দুটি তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় পাইলট ও গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের ভুল ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় পাইলট ও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হবে।

পাইলট নিক্সন বাড়ইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফ্লাইট নিয়ে দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে পাইলটদের সংগঠন বাপা’র (বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় পাইলট নিক্সন কোনোভাবেই দায়ী নন।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় পাইলট ফ্লাই করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে বাতাসের চাপে বের হয়ে থাকা বিমানের সব চাকা আকাশেই দুমড়ে-মুচড়ে উড়ে যেত। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও ছিল।

বোয়িং চেক লিস্ট ও পাইলটের লাইসেন্সিং শর্ত অনুযায়ী সব ধরনের ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে পাইলট ও কো-পাইলট বিমানের চারদিকে ঘুরে ঘুরে (এক্সটার্নাল ইন্সপেকশন) সবকিছু হাতেকলমে দেখার কথা।

এর মধ্যে অন্যতম হল বিমানের চাকায় লাগানো সব সেফটি পিন খোলা হয়েছে কিনা, তা সরেজমিন দেখার পর নিশ্চিত হওয়া। শুধু ল্যান্ডিং গিয়ারের পিন খোলা হবে পাইলট ককপিটে বসার পর। এয়ারক্রাফট টেকঅফের আগমুহূর্তে গ্রাউন্ড টেকনিশিয়ানরা ওই পিনগুলো খুলে পাইলটকে দেখাবেন। পাইলট ককপিটের মনিটরে পিনগুলো দেখে নিশ্চিত হলেই কেবল বিমানের ব্রেক ছাড়ার নির্দেশ দেবেন।

কিন্তু ওই ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন নিক্সন বাড়ই পিন না দেখেই ব্রেক ছাড়ার নির্দেশ দেন এবং ফ্লাইটটি বিপজ্জনকভাবে টেকঅফ (উড্ডয়ন) করান বলে জানা গেছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমানের সাবেক বোর্ড মেম্বার ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমান প্রশাসনে এখন কোনো শক্তিশালী চালক নেই। এ ম্যানেজমেন্টের কথা কেউ শুনে না, পাত্তাও দেয় না। একটা ভঙ্গুর ম্যানেজমেন্ট।

তিনি বলেন, সাধারণত উড্ডয়নের আগে যে কোনো ফ্লাইটের সব চাকায় সেফটি পিন লাগানো থাকে, যাতে কেউ ভুল করেও চাকা উঠাতে না পারে। নিয়ম হল ফ্লাইটে যাওয়ার আগে এসব পিন খুলে ফেলতে হয় টেকঅফের পর যাতে চাকাগুলো গুটিয়ে ফেলা যায়। তার মতে, এ দায়িত্ব সাধারণত গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের।