Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ভুল করলে বিপদ

north-koreaএ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করলে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দেয়। এর আগে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে হামলার হুমকি দিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জবাব দেন, উত্তর কোরিয়াকে পরিণামে ‘গুলি ও ক্রোধ’ সহ্য করতে হবে। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে মানুষ কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। উচ্চবিদ্যালয়ের এক বন্ধু আমাকে বহুদিন পর ই-মেইল করেছেন, ‘আমাদের রক্ষা করো।’

আমার বন্ধু জানেন আমি ১৫ বছর ধরে উত্তর কোরিয়া ও পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর কাজ করছি। শুধু তা-ই নয়, আমি যে পারমাণবিক নীতি-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় গেছি, সেটাও তাঁর অজানা নয়। তবে তিনি শুধু একা নন, ফেসবুক বন্ধু, সাংবাদিক ও আত্মীয়স্বজনেরাও একই প্রশ্ন করছেন।

chardike-ad

না, এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বাধছে না। সামরিক মহড়া ও ট্রাম্পের তাৎক্ষণিক হুমকির মানে এই নয় যে যুদ্ধ লেগে গেল বলে। ইতিহাসে দেখা যায়, প্রথাগত যুদ্ধ প্রতিদিনই হয় না। পারমাণবিক যুদ্ধের কথা বলছি না, সাধারণ যুদ্ধের কথাই বলছি, যেসব যুদ্ধে লাখে লাখে মানুষ মারা যায়। এই যুদ্ধ প্রতিদিনই হয় না, কিন্তু যখন হয়, তখন আর রক্ষা নেই।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মৌলবাদীদের তেমন পরিবর্তন হয়নি। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সঠিকভাবেই বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক শক্তিতে অনেক বেশি বলীয়ান। যুদ্ধ লেগে গেলে উত্তর কোরিয়া খুব বাজেভাবে হেরে যাবে। আর এর মধ্য দিয়ে কিম জং-উনের জমানার অবসান হবে।

তার মানে এই নয় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে, স্থিতিশীল হওয়া তো দূরের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম—পিয়ংইয়ং এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কেউ মেনে নিতে পারবে না। আবার এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে বর্তমানে রাশিয়া ও চীনও মার্কিন শহরের দিকে পারমাণবিক অস্ত্র তাক করে রেখেছে, ঠিক যেমন যুক্তরাষ্ট্র তাদের দিকে পারমাণবিক অস্ত্র তাক করে রেখেছে। পরিস্থিতি ভালো নয়, কিন্তু ব্যাপারটা একদম নতুন কিছু নয়।

তবে উত্তর কোরিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে না চায়, তাহলে তারা এত দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই। ব্যাপারটা হলো, শত্রুর উদ্দেশ্য বোঝা কঠিন, তবে উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্য বোঝা আরও চ্যালেঞ্জিং, যে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বদ্ধ দেশ। উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নীতির দুটি দিক রয়েছে, তারা যেমন পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চায়, তেমনি নিজেদের অর্থনীতিও গড়ে তুলতে চায়। তার পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কারণ হচ্ছে, সে সত্যই মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সরকার পরিবর্তন করতে চায়। সেই বিবেচনায় এবং সাদ্দাম হোসেনের মতো ভাগ্য এড়াতে তাদের এই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে হবে। অন্যদের যুক্তি হলো, উত্তর কোরিয়া দর-কষাকষি করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছে। আবার আরেক দল মনে করে, নতুন উসকানি দেওয়ার জন্য তারা পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে।

আমার মনে হয়, ব্যাপারটা আমাদের জ্ঞাত নয়, আর যেটা আমরা জানি, সেটাও সময় সময় বদলে যায়। আমরা শুধু জানি, চেয়ারম্যান কিম দেশটি নিয়ন্ত্রণ করেন। নিয়ন্ত্রণ ছাড়ার ইচ্ছা তাঁর নেই। আর যুদ্ধের কারণে তিনি বিপদে পড়তে পারেন। আসলে এটাও সত্য নয়, ব্যাপারটার মধ্যে খ্যাপাটে বিপজ্জনক প্রবণতা রয়েছে। তবে ইতিহাস বলে, পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চেয়ে আলোচনাই বেশি ফলপ্রসূ হয়। আলোচনার সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে ভুল-বোঝাবুঝি ও ভুল ধারণার অবসান ঘটানো যায়। এদিকে ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী ঘোষণার পর দক্ষিণ কোরিয়াও একটু বিপদে পড়েছে। এতে দেশটির প্রেসিডেন্ট কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে টেলিভিশন ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য হলো, ‘কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হলে দক্ষিণ কোরিয়ার মতৈক্য ছাড়া কেউ তা করতে পারবে না।’ উল্লেখ্য, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদ খালি পড়ে আছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ নয়, বরং এর বিস্তারই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর মানে হলো, আপনার বা বন্ধুরাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র সমস্যা নয়। সেটা যদি ‘বাজে দেশের’ হাতে গিয়ে পড়ে, তাহলেই বিপদ।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হঠকারী মন্তব্য আমাদের এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে পারমাণবিক অস্ত্র মানেই বিপজ্জনক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরটাও। মার্কিন প্রেসিডেন্টও ভুল করতে পারেন, অতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে তিনি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারেন। নেতারা তো মানুষ, মানুষমাত্রই ভুল করতে পারে। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে ভুল করলে তার পরিণতি হবে বিপর্যয়কর। সম্ভবত, পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ আমলে নেওয়ার সময় এসেছে।

জিম ওয়ালশ: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, আল-জাজিরা থেকে নেওয়া