Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উত্তর কোরিয়ায় পণ্য রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩:

উত্তর কোরিয়ায় বেশ কিছু পণ্য রফতানিতে নতুনভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন সরকার। নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে অস্ত্র-সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন দেশটির পারমাণবিক প্রকল্প নিরুত্সাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং। খবর এপির।

chardike-ad

গতকাল মঙ্গলবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কয়েক দিন আগে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতার বিষয়ে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করার পরই দেশটিতে পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল শি জিনপিং সরকার। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে ভিনদেশীদের প্রবেশের সুযোগ নেই। তবে তাদের সক্ষমতার হ্রাস টেনে ধরতে পারে চীনের এ সিদ্ধান্ত।

imagesনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় সামরিক, বেসামরিক— দুই ধরনের পণ্যই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পারমাণবিক, ব্যালিস্টিক, রাসায়নিক ও জৈব পণ্য। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চীনা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লি মিংইয়াং বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটিকে কিছুটা চাপে ফেলতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চীন কাউকে না জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারত। কিন্তু তারা প্রকাশ্যেই তালিকা তৈরি করে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের পাশাপাশি নিজেদেরকে দায়িত্ববান প্রমাণ করেছে। অধ্যাপক মিংয়ের মতে, এটি পিয়ংইয়ংয়ের জন্য তিরস্কারের শামিল। তিনি আরো বলেন, এ সিদ্ধান্তে পিয়ংইয়ংয়ের নেতারা অবশ্যই ক্ষুব্ধ হবেন। এটি তাদের জন্য তেতো ওষুধ গেলার মতো। এ বিষয়ে তারা অবশ্যই সমঝোতার চেষ্টা করবেন।

বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্কিত একটি দেশ। কিন্তু দেশটির নানা কর্মকাণ্ডে প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ হয়েও চীন তা এড়িয়ে যেত। আগেও চীনকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও তারা তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেনি। গতকালের সিদ্ধান্তটি চীনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। উত্তর কোরিয়া গত ডিসেম্বরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয়বারের মতো চালায় পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা। এ দুই ঘটনায় চীন বিরক্তি প্রকাশ করে। এর ধারাবাহিকতায় গত মার্চে উত্তর কোরিয়ার নতুন কোনো অস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে সতর্কতা জারি করে চীন।

উত্তর কোরিয়ার নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসেন কিম জং উন। চীনের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সংস্কার ও পারমাণবিক অস্ত্র আলোচনায় তিনি গুরুত্ব দেননি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছে চীনা সরকার।

উত্তর কোরিয়া প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য আমদানি করে চীন থেকে। দেশটি প্রায় সব জ্বালানি সংগ্রহ করে চীন থেকে। অন্যান্য পণ্যের ৮৩ শতাংশেরই জোগান দেয় চীন। এর মধ্যে রয়েছে ভোক্তা পণ্য থেকে শুরু করে ভারী যন্ত্রাংশ। কয়েক দিন আগে দেশ দুটির সম্পর্কে উন্নতি দেখা গেলেও, চীনের বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমের সমালোচনার মুখে পড়ে। গত সপ্তাহে পূর্বশর্ত না মেনেই চীনের সঙ্গে নতুন করে বৈঠক করতে চায় উত্তর কোরিয়া। এতে সমালোচনা আরো জোরালো হয়।

যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণা থেকে সরে না আসবে, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কয়েক দিন আগে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অপরিহার্য উপাদান গ্যাস সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্র তৈরি করতে শিখেছে উত্তর কোরিয়া। এতে আন্তর্জাতিক মহলেরও উদ্বেগ আরো বেড়েছে।

গত কয়েক মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, প্রতিরক্ষা দফতরের জেমস মিলার ও উত্তর কোরিয়াবিষয়ক দূত গ্লিন ডেভিস লবিংয়ের জন্য চীন সফর করেছেন। চীনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে তাদের ওই প্রচেষ্টাই খানিকটা হলেও সফল হলো। সম্প্রতি চীনের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ায় রফতানি হওয়া বিলাসদ্রব্যে ব্যাপক নজরদারি চালাচ্ছে।
সূত্রঃ বণিক বার্তা