যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির দিকে শ্যেনদৃষ্টি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে নাছোড়বান্দা কিম জং-উনও এ কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসতে নারাজ। এর প্রতিক্রিয়ায় কিম জং-উনের সমালোচনার পাশাপাশি তাকে উপহাস করতেও ছাড়েননি ট্রাম্প। একই সঙ্গে চীনের মতো বিভিন্ন দেশকে পিয়ংইয়ংকে অস্ত্র কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য চাপ দিয়ে চলেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় কমসংখ্যকই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে উত্তর কোরিয়ার কাছে।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নয়টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ করে চলেছে, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড়ও কম ওঠেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর আণবিক বোমা নিক্ষেপের কয়েক বছর পরেই নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা সৃষ্টিতে কাজ শুরু করে রাশিয়া। অল্প পরেই রাশিয়াকে অনুসরণ করতে শুরু করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন।
ষাটের দশকের মধ্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কয়েক ডজন দেশের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি আর পরীক্ষা বিশ্বের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। এর সূত্র ধরেই ১৯৬৮ সালে নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) গঠন করা হয়, যার আওতায় পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়া রোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়াসহ অল্প কয়েকটি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে।
এক নজরে কোন দেশের কাছে কত পারমাণবিক অস্ত্র—
উত্তর কোরিয়া ৬০: অনেক বছর ধরেই দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমিয়ে আনতে সচেষ্ট যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালে এনপিটি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসে পিয়ংইয়ং। তিন বছর পরে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় দেশটি। বর্তমানে দেশটির কাছে আনুমানিক ৬০টি পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা জানা গেছে।
ইসরায়েল ৮০: আনুষ্ঠানিকভাবে কখনই পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি দেশটি। তবে কয়েক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, তা সবারই জানা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা মিত্ররাও ইসরায়েলের এই ‘গোপনীয়তা’ বজায় রাখার নীতিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। বর্তমানে দেশটির কাছে রয়েছে ৮০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র।
ভারত ১৩০, পাকিস্তান ১৪০: দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশ ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে বৈরী সম্পর্ক, যার জেরে উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে চলেছে। যদিও নিজেদের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকছে দেশ দুটি। ভারত ও পাকিস্তানের কাছে যথাক্রমে আনুমানিক ১৩০ ও ১৪০টি পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ৬ হাজার ৮০০: ১৯৪২ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এনপিটিতে স্বাক্ষর করলেও ব্যবহার না করার নীতি মেনে নেয়নি বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশটি। পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্রের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজারের বেশি।
রাশিয়া ৭ হাজার: যুক্তরাষ্ট্রের পর পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নে যুক্ত হলেও এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার কাছে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার