সিউল, ২৩ অক্টোবর ২০১৩:

কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (কোইকা) আর্থিক সহায়তায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করেছে। চট্টগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) স্থলে এখন থেকে এটি পরিচিত হবে বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিকেটিটিসি) নামে।
2be5d5f38fa1fdc680b8994c676cca81গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণের ফলক উন্মোচন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান ইয়ং। ফলক উন্মোচনের আগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহা-পরিচালক বেগম শামছুন নাহারের সভাপতিত্বে বিকেটিটিসি মিলনায়তনে ফলক উন্মোচন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হযরত আলী ও কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান ইয়ং বক্তব্য রাখেন।

মোহাম্মদ হযরত আলী তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭২ সালে কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা বাণিজ্য ও এদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আর এ সম্পর্কের ফল হচ্ছে আজকের বিকেটিটিসি’র আধুনিকায়ন। এ সময় তিনি কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বিকেটিটিসি’র মতো ফরিদপুর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকেও গড়ে তোলার অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, এদেশের রেডিমেড গার্মেন্টসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ দক্ষিণ কোরিয়ার।

chardike-ad

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের ৪০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বিরাজমান। দক্ষ মানব সম্পদ যেকোন দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি। এ লক্ষ্যে এদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে আমাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাত্রা দিনদিন আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কোইকা’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান চোং সিক, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহা-পরিচালক নিজাম উদ্দিন, বাংলাদেশে কোইকার আবাসিক প্রতিনিধি কিম বুক-হী ও বিকেটিটিসির অধ্যক্ষ আবদুল খালেক মিয়া প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিশু কিশোরদের একটি দল প্রথমে কোরিয়ান সঙ্গীত ও পরে বাংলাদেশী সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সবাইকে মুগ্ধ করে।

বিকেটিটিসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ১৯৬২ সালে ১১ দশমিক ৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এটির নাম ছিল স্টাফ অ্যান্ড ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার (এসভিটিসি)।

ওই সময় এটি সরাসরি শ্রম মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতো। সে সময় প্রশিক্ষণার্থীদের তিন ও ছয় মাসের কোর্স করানো হতো। ১৯৭৬ সালে সরকার এটির দায়িত্ব জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কাছে হস্তান্তর করে। নামকরণ করা হয় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)।

বিভিন্ন সময় এর উন্নয়নে আইএলও, জাইকা, জেওসিভি ও ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা যুক্ত হয়। ২০০৫ সালে টিটিসিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে যুক্ত হয় কোইকা। তারা টিটিসিকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নীত করে এবং বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে। সর্বশেষ কোইকা প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক আধুনিকায়ন সম্পন্ন করে। গতকাল থেকে এটি নতুন নামে যাত্রা শুরু করলো। এখানে বিভিন্ন মেয়াদে আন্তর্জাতিক মানের ৬টি ট্রেড কোর্সে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ আবদুল খালেক মিয়া বলেন, এতোদিন কোর্সগুলো যুগোপযোগী না হওয়ায় দেশে বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণে অক্ষম ছিল টিটিসি। বর্তমানে কোইকার সহযোগিতায় নতুন আঙ্গিকে বিশ্বমানের জনশক্তি তৈরি করতে কোর্সগুলো সাজানো হয়েছে। টিটিসি’র নতুন যাত্রার ফলে বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হলো। যা বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।

৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) আধুনিকায়নের এ কাজ সম্পন্ন হয়। ‘এনহেন্সিং দ্য ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম অব টিটিসি চিটাগাং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩৬ মাসের এ প্রকল্পটি যথাসময়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান বিকেটিটিসি’র অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল খালেক মিয়া।

এ প্রকল্পের আওতায় টিটিসি’র ১৮ জন শিক্ষককে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে দেড় মাসের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। সূত্রঃ আজাদী