দুই কোরিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্মেলনের আয়োজনের পিছনের নায়ক কে? শুক্রবার পানমুনজামে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন যে ইনের মধ্যে বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার পর নৈপথ্যের নায়ক নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। কোরিয়ান মিডিয়াও অনেককে সামনে এনেছে। ট্রাম্প, মুন নাকি কিম? আলোচনায় থাকা এই তিনজনকে ছাড়িয়ে আরেকজনের নাম আসছে কোরিয়ান গণমাধ্যমে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান স হুন (서훈)।
দুই নেতার যখন যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করছিলেন পিছনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি মোছেন স হুন। মিডিয়ার চোখ এডায়নি সেই সুখের কান্না।
গত শুক্রবারের এই ঐতিহাসিক আয়োজনের পেছনে স হুন মূল ভূমিকা পালন করেছেন। ১৮ বছর আগে ২০০০ সালে তৎকালীন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম দে জং এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং ইল এবং ২০০৭ সালে তৎকালীন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নো মু হিয়ন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলের যে দুই ঐতিহাসিক সম্মেলন পিয়ংইয়ং এ অনুষ্ঠিত হয় সেখানেও স হুন মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
২০০৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদত্যাগ করেন স হুন। গত বছর উদারপন্থী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট মুন স হুনকে আবারো জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় (এন আই এস) ফিরিয়ে আনেন এবং তাকে বাহিনীর প্রধান করেন। প্রেসিডেন্ট মুন স হুনকে নিয়োগ দানের তাকে দুই কোরিয়ার সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
স হুন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এন আই এস) প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত মার্চ মাসে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে পিয়ংইয়ং সফর করেন। কিম জং ইলের মৃত্যুর পর ২০১১ সালে ক্ষমতায় বসা উত্তর কোরিয়ার তরুণ নেতা কিমের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম কোনো প্রতিনিধি হিসেবে তিনিই সাক্ষাৎ করেন।
ওই বৈঠকের পর কিম জং উন শুধু মুন জে ইনের সঙ্গে দেখা করতেই রাজি হননি, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। স হুন এরপর একটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের পিয়ংইয়ং সফরের ব্যবস্থা করেন। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান (বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মাইক পম্পেও পিয়ংইয়ং সফর করেন। আগামী মাসে এরই অংশ হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কিম জং উনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।
৬৪ বছর বয়সী স হুন ২৮ বছর কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেছেন। স হুন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করেন। পরবর্তীতে নর্থ কোরিয়া এফেয়ার্স নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দোংগুক ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানে দ্বায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ইহোয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ভিসিটিং প্রফেসর হিসেবেও কাজ করছেন।
বিটি/সক/সিউল