Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র

trump-rouhaniশেষ পর্যন্ত ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ইরান তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি, পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে’, এই যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি এই চুক্তিতে সমর্থন দিয়ে যাই তবে শিগগির মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। সবাই ইরানের মতো একই অস্ত্র এবং একই সময়ে পেতে চাইবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কখনো ফাঁকা হুমকি দেয় না। আমি যা অঙ্গীকার করি, তা রাখি।’

গোড়া থেকেই ওই চুক্তির বিরোধী ট্রাম্প পাশাপাশি ইরানের ওপর সর্বোচ্চ পর্যায়ে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন। দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের ওপর এই অবরোধ আরোপ করা হবে।

chardike-ad

চুক্তি থেকে সরে না যাওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের অনুরোধ-আহ্বান উপেক্ষা করেই ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। ইউরোপীয় মিত্ররা চুক্তিটিকে বাঁচাতে জোর চেষ্টা চালিয়েছে কয়েক মাস ধরে। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) ট্রাম্প তাঁর অবস্থান জানান। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ২০১৫ সালে আরো ভালো একটি চুক্তি পেতে পারতাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘কথিত ইরান চুক্তিটি হয়েছিল ইরানের পরমাণু বোমার পাগলামি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্রদের রক্ষা করার জন্য, ওই অস্ত্র শুধু ইরানি শাসকদের টিকে থাকার প্রতিও হুমকি।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের কাছে চূড়ান্ত প্রমাণ আছে যে ইরানের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা ছিল।’

ট্রাম্প এর আগে ১২ মে পর্যন্ত বিশ্ব নেতাদের চুক্তিটি পুনরায় যাচাইয়ের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চার দিন আগেই তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। ডেডলাইন শেষ হওয়ার চার দিন আগে ঘোষণা বিষয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, জেরুজালেমে আগামী সপ্তাহে ট্রাম্পের মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত রয়েছে। ইরানের পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থান ওই দূতাবাস খোলার ইস্যুটিকে তাতিয়ে দিতে পারে। এ কারণেই তিনি ১২ মের ডেডলাইনের কয়েক দিন আগেই ঘোষণাটি দিলেন যাতে তাঁর জেরুজালেম সফর নির্ঝঞ্ঝাট করার সুযোগ থাকে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি ও রাশিয়া তিন বছর আগে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের (জেসিপিওএ) নামের ওই চুক্তি করেছিল। ট্রাম্প শুরু থেকেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে স্বাক্ষরিত ওই সমঝোতা চুক্তির কঠোর বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এর চেয়ে বাজে চুক্তি আর হয় না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময়ই তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে চুক্তি থেকে বের হয়ে যাবেন তিনি। ট্রাম্পের জন্য এটি তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণেরও একটি বিষয়।

চুক্তি রক্ষায় শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা হিসেবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এখন ওয়াশিংটনে। ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। গতকাল এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই নেতা ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে’ কথা বলেছেন। গত মাসে ওয়াশিংটন সফরের সময় ম্যাখোঁ অনেকটা ইইউয়ের দূত হিসেবেই চুক্তিটি বহাল রাখার ব্যাপারে ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

ট্রাম্পের ঘোষণার আগে ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র না থাকলেও একটি ব্যাপকতর চুক্তি করার ব্যাপারে ফ্রান্স প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

গতকাল ব্রাসেলসে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তাঁরা এ সময় ইরানের পরমাণু চুক্তির প্রতি তাঁদের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সূত্র: এএফপি, সিএনএন।