সিউল, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩:
জাপানকে টপকে ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে ভারত। দেশটির মাত্র দুই ধাপ উপরে থাকবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়। খবর রয়টার্সের।
গতকাল শনিবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসংখ্যার সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এর ধারাবাহিকতায় ২০২৮ সাল নাগাদ দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ভারতের পরই থাকবে জাপান ও ব্রাজিল।
সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল ২০১৩ অনুসারে, উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের অর্থনীতিতে চোখে পড়ার মতো উন্নতি দেখা যাবে। দেশটির জিডিপি ২০২৮ সালে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারে। ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত দেশটির অবস্থান হবে বিশ্বে ১২তম। প্রতিবেদনটিতে তুরস্ক সম্পর্কে আরো বলা হয়, ২০১৩ সাল শেষে তুরস্কের জিডিপি দাঁড়াবে ৮২২ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্বে তাদের অবস্থান থাকবে ১৭ নম্বরে। ২০১৮ সালে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ১ দশমিক ২৮ ট্রিলিয়নে। তখন বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় ১৫ নম্বরে থাকবে দেশটি। ২০২৩ সালে অবস্থান একই থাকলেও জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে।
সিইবিআরের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০১৮ সালে সবচেয়ে বড় পাঁচটি অর্থনীতির তালিকায় থাকবে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এর পর পরই থাকবে উদীয়মান অর্থনীতির নেতা রাশিয়া, ব্রাজিল ও ভারত। ২০২৩ সাল থেকে বিকাশমান অর্থনীতিগুলো তালিকায় ওপরের দিকে উঠতে শুরু করবে। ২০২৮ সালে ৩৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠবে চীন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
২০২৮ সাল নাগাদ শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতি হবে যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ব্রাজিল। এরপর ক্রমানুসারে থাকবে জার্মানি, যুুক্তরাজ্য, রাশিয়া, মেক্সিকো, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ক।
বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী দিনগুলোয় বিশ্ব অর্থনৈতিক র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান।
এছাড়া ইউরোপের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতিধারাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে পুরো চিত্রটিতে।
তবে বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উঠে আসার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন সিইবিআরের বিশ্লেষকরা। বর্তমানে জিডিপি র্যাংকিংয়ে শীর্ষ ২০টি দেশ হলো— যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইতালি, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড।
উদারীকরণের ফলে হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিগুলো ছাড়া প্রায় সবক্ষেত্রেই উন্নত দেশগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। প্রবৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ ভোগের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা তুলনামূলক বেশি। ২০০৮-০৯ সালের মন্দার পরের বছরগুলোয় দেখা যাচ্ছে, ভোক্তাদের চাহিদা বাড়ানোই অর্থনীতির নীতিনির্ধারকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জিডিপির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সেবা খাত।
ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, শ্রমের ব্যয় সেসব দেশে তুলনামূলক বেশি। এছাড়া সমাজকল্যাণ, মানবাধিকার ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিপালন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিত করা এমনকি বিশ্বে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার জন্যও তাদের ব্যয় উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের মতো দেশগুলোর মূল হাতিয়ার তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগগুলো। ভালো সময়েও ২-৩ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি এসব দেশে বিরল।
অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের উত্পাদন ও রফতানিমুখী নীতি ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। সস্তা শ্রমই তাদের মূল হাতিয়ার। এর বাইরে অনেক অধিকার ও আইনি বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনে তারা এখনো তুলনামূলক কম বাধ্য। পেটেন্ট, মেধাস্বত্ব, ন্যূনতম মজুরি এমন অনেক ক্ষেত্রে শিথিলতা কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে রাখছে। খারাপ সময়েও গড়ে ৫-৬ শতাংশের ওপর থাকছে তাদের প্রবৃদ্ধি। সূত্রঃ বণিকবার্তা।