Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভ্রমণে ফটো আইডি বাধ্যতামূলক

biman-bangladeshঅভ্যন্তরীণ রুটে ফটো আইডি ছাড়া যাত্রীদের বিমানে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন। এখন থেকে এই রুটে টিকিট কাটার সময় যাত্রীদের ফটো আইডি প্রদর্শন করতে হবে। এ ছাড়া শাহজালালসহ দেশের সব কটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে রোববারের বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সচিত্র প্রতিবেদন (ভিডিও ক্লিপিংসহ) উপস্থাপন করা হয়।

chardike-ad

পুরো ঘটনা অবহিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ব্যাগেজ-লাগেজ আরও নিখুঁতভাবে স্ক্যান করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন তিনি।

এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিইউ)। জানা গেছে, শুরুতেই মামলার আলামত সংগ্রহের কাজ করছে তদন্ত দল। এরপর প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তারা।

এরই মধ্যে মামলার আলামত হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকা উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খি’কে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তবে জব্দ তালিকায় দেখানোর পরপরই এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় ব্যবহৃত ‘খেলনা পিস্তলটি’ মঙ্গলবার রাতে আলামত হিসেবে বুঝে নিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী একটি উড়োজাহাজ অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল পলাশ। কিন্তু পাইলটের বুদ্ধিমত্তা এবং যৌথ বাহিনীর সফল কমান্ডো অভিযানে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এতে নিহত হয় পলাশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখনও নিহত পলাশ আহমেদ মাহদী কেন বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছিল সে বিষয়ে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তাদের কাছ থেকেও এ ঘটনার মোটিভ জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জের নিজ বাড়িতে পলাশ আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন নিহত পলাশের বাবা।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের কাছে খুদেবার্তা পাঠানো শুরু করেছে। সিভিল এভিয়েশনের সার্কুলারে বলা হয়েছে- অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে ছবিসংবলিত আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। ফটো আইডি ছাড়া বোর্ডিং কার্ড প্রদান না করতে এয়ারলাইন্সগুলোকেও কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ নিয়মিতভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

অভিযোগ আছে, এর আগে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এসব বিমান সংস্থাকে বেশ কয়েক দফা আইডি কার্ডের বিষয়ে বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হলেও তা মানেনি কেউ।

বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ যুগান্তরকে বলেন, নিরাপদে বিমান চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ফটো আইডি বাধ্যতামূলক করেছে।

তিনি বলেন, বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগ থেকে এ নির্দেশনা পাওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরের পর বিমানের সব অভ্যন্তরীণ স্টেশনে বাংলা ও ইংরেজিতে এ সংক্রান্ত নোটিশ টানানো হয়েছে। একই নির্দেশনা পাঠিয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষও।

নির্দেশনা অনুযায়ী, যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠার আগে পরিচয়পত্র দেখিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- যাত্রীর বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্টকার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড কিংবা চাকরিজীবীদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলের পরিচয়পত্রের যে কোনো একটি পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হবে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান, মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজালালের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। সেখানে দীর্ঘ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত ব্রিফ করেন।

ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শনের মাধ্যমে সেদিন কীভাবে পলাশ আহমেদ মাহাদী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অতিক্রম করেন তা উপস্থাপন করেন।

তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের ত্রুটি যে ছিল না, সেটা ভালো করেই উপস্থাপন করা হয়। এদিকে ঘটনার তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা যায়, আগের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ কড়াকড়ি।

বিমানবন্দরের কনফারেন্স কক্ষে এদিনও তদন্ত কমিটি ওই দিন অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের জবানবন্দি রেকর্ড করতে দেখা গেছে। বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, পলাশের কাছে যে পিস্তল ছিল সেটি খেলনা। তার শরীরে বোমা

বাঁধা ছিল বলে যে কথা উঠেছে- তা ভুয়া। আসলে সে প্লাস্টিকের পানির পাইপ ছোট ছোট করে কেটে কয়েক টুকরো বুকে বেঁধে রেখেছিল গুনা তার দিয়ে। তার সঙ্গে নিজের হাতঘড়ির ফিতা ছিঁড়ে বেঁধে রেখেছিল, যাতে মনে হতে পারে এটা টাইম বোমা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খি’ উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, উড্ডয়নরত অবস্থায় বিমানের ভেতর পটকাজাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায় পলাশ। এরপর বিমান ধ্বংসের হুমকি দেয়।

যাত্রী ও আরোহীদের মধ্যে সৃষ্টি করে মৃত্যুভয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট চট্টগ্রামের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘তদন্তের প্রাথমিক কাজ হল ঘটনার আলামত সংগ্রহ করা। কমান্ডো অভিযানে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের কাছে যেসব আলামত আছে, তা শিগগির বুঝে পাব। এরপর শুরু হবে মাঠপর্যায়ের তদন্ত।’

রাজেশ বড়ুয়া আরও বলেন, ‘যে উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল, সেটি আমি আলামত হিসেবে জব্দ করেছি। যেহেতু এটি সরকারি সম্পত্তি, তাই জব্দ করার পর বিমান কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি বিমান ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত ‘খেলনা পিস্তলটিও’ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।’

ঘটনার সময় বিমানে থাকা ক্রুদের সঙ্গে শিগগির কথা বলবেন জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্রুরা এখন ঢাকায় আছেন। সে জন্য তাদের সঙ্গে এখনও কথা বলতে পারিনি। তবে তাদের আমি ডাকব।’

চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ম্যানেজার উইং কমান্ডার সরোয়ার-ই-জামান যুগান্তরকে জানান, উড়োজাহাজটি এখনও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই রয়েছে। তদন্ত কমিটির একটি দল সোমবার এটি পরিদর্শন করেছে। আরেক তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাল বা পরশু এসে এটি পরিদর্শন করবেন। এরপর উড়োজাহাজটি ঢাকায় চলে যাবে।’